জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, সরকার জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়েছে, যেখানে তারা "দরদ দেখিয়েছে কিন্তু কোনো দায় দেখায়নি।" শুক্রবার রাতে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছিল, যেখানে "নোট অব ডিসেন্ট"ও ছিল। এনসিপি শুরু থেকেই এই সনদের আইনি ভিত্তি বা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া দাবি করে আসছিল। তিনি বলেন, "সরকার আইনি ভিত্তি দিয়েছে। সরকার এখানে দরদ দেখিয়েছে কিন্তু সরকার কোনো দায় দেখায়নি। অর্থাৎ আপনার যখন কোথাও কম্পেশন থাকবে আপনার রেসপন্সিবিলিটি নিতে হবে।"

তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে "তরকারি বাটি থেকে এক চামচ, এক চামচ করে ভাগ করে দিয়েছে।" বিএনপি ও জামায়াতকে এক চামচ করে দেওয়া হলেও "জনগণের প্লেট খালি হয়ে গেছে।" পাটওয়ারী প্রশ্ন তোলেন, "আমরা কী চেয়েছিলাম? এই গণঅভ্যুত্থানের পরে ’৭২-এর যে ফ্যাসিবাদী সংবিধান, সেই সাংবিধানিক কাঠামোকে পরিবর্তন করে জনগণের একটা কাঠামো নিয়ে আসতে। যাতে নতুন করে কেউ হাসিনার মতো আবিষ্কৃত না হয়ে জনগণের ওপর গুলি চালাতে না পারে। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, এক হাসিনা যাওয়ার পরে আরেক হাসিনা আসার জন্য আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।"

এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক আরও অভিযোগ করেন, জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা শুরুতেই স্বাক্ষর করতে চাননি। তারা দাবি করেছিলেন, যে আদেশ দেওয়া হবে তার খসড়া আগে দেখাতে হবে। কিন্তু সরকার এই খসড়া না দেখিয়ে নিজস্ব ক্ষমতা বলে একটি আদেশ জারি করেছে। তিনি দাবি করেন, "যিনি ড্রাফটটা করেছেন...তার মনে যদি বাংলাদেশের জনগণ থাকত, এই ধরনের ড্রাফট উনি তৈরি করতেন না। এ ধরনের আদেশ তিনি তৈরি করতেন না। এটা আদেশ হয়েছে কিন্তু একটা জনবিরোধী আদেশ হয়েছে। উনার মাথায় ছিল বিএনপির প্রেসক্রিপশন।" তিনি আরও বলেন, "উনি (আইন উপদেষ্টা) গত গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এই পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানকে কীভাবে মুজিবীয় সংবিধানের ভেতরে ঢুকানো যায় এই প্রচেষ্টাই করে যাচ্ছেন। উনি আমাদের আইন উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। উনি যদি জনগণকে মাথায় রাখতেন এই ধরনের আদেশের ড্রাফটিংটা করতেন না।"

পাটওয়ারী বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, তারা (বিএনপি) সংস্কার কমিশনে গিয়ে "গুন্ডামি" করেছে। যখন সব দল একটি বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে, সেখানে তারা ভেটো দিয়ে বলেছে "আমরা এটা মানব না।" তিনি বলেন, "খেলায় আছি কিন্তু তালগাছটা আমার।" তার মতে, সংস্কার কমিশন বিপদে পড়েছে, তারপরও দেশের স্বার্থে ওই দলের "নোট অব ডিসেন্ট" রেখে তারা সামনের দিকে এগিয়েছেন।

এনসিপি নেতা জানান, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তারা পেয়েছেন, কারণ সরকার আদেশ দিয়েছে, কিন্তু "নৈতিক ভিত্তির জায়গাটা আমরা পাইনি।" তিনি বলেন, সরকার এই সনদের শুরুতে "গণঅভ্যুত্থান" শব্দটা উচ্চারণ করেছে এবং সার্বভৌম অভিপ্রায়ের যে প্রকাশ সেটা জনগণ থেকে নিয়েছে। কিন্তু "সেই সার্বভৌম অভিপ্রায়ের যে সাইন, যার মাধ্যমে দিয়েছে, উনি কিন্তু জনগণের ওপর কয়েকদিন আগে গুলি চালিয়েছিলেন। সরকার এখানে আইনি ভিত্তি দিলো। কিন্তু এই জুলাই সনদকে সে অপবিত্র করেছে।"

সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।