কর্পোরেট দুনিয়ায় ভুল করাকে অনেকেই ‘অযোগ্যতা’ হিসেবে দেখেন। এই ভয় থেকেই কর্মীরা প্রায়শই নিজেদের ভুল ঢাকতে মিথ্যার আশ্রয় নেন। ডেডলাইন মিস হলে ‘ইন্টারনেট ছিল না’ কিংবা কাজে ভুল হলে ‘অন্যের দোষ’—এমন হাজারো অজুহাতে আমরা প্রতিনিয়ত পার পাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও, মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া আসলে বালুচরে ইমারত গড়ার মতো। কারণ, সত্য গোপন থাকে না, আর একবার মিথ্যা ধরা পড়লে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়, তা পুনরুদ্ধার করা বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমের চেয়েও কঠিন।
ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন বস তার কর্মীর ভুল ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু অসততা নয়। ভুলের পরে আপনার প্রতিক্রিয়া ঠিক করে দেয় আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা অপরিহার্য। ভুল হওয়ার পর প্যানিক না হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলানো এবং মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে সমাধানের পথে হাঁটাই হলো সত্যিকারের লিডারশিপের লক্ষণ। কিন্তু সেই কঠিন মুহূর্তে কী বলা উচিত? কীভাবে বসের রাগ কমিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করবেন? এসব কার্যকর ও স্মার্ট কৌশল নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের প্রতিবেদন।
সরাসরি সত্য বলুন ও ভুল স্বীকার করুন
ডেডলাইন মিস হলে বা কোনো ভুল করে ফেললে অজুহাত না দেখিয়ে সরাসরি স্বীকার করুন। বসকে বলুন, ‘আমার ভুল হয়েছে, আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি বা সময়ের হিসাব রাখতে পারিনি।’ বসরা সাধারণত অজুহাতের চেয়ে সততাকে বেশি মূল্যায়ন করেন।
সমস্যা নয়, সমাধান নিয়ে যান
বসের কাছে শুধু সমস্যার কথা বলবেন না। ভুলের কথা জানানোর পাশাপাশি সেটি কীভাবে সংশোধন করবেন, তার একটি পরিকল্পনাও উপস্থাপন করুন। যেমন—‘কাজটি আজ শেষ হয়নি, তবে আমি আগামীকাল দুপুরের মধ্যে এটি জমা দেব।’ এতে আপনার দায়িত্বশীলতা প্রকাশ পায়।
আগে থেকেই আপডেট দিন
শেষ মুহূর্তে গিয়ে ‘কাজটি হয়নি’ বলার চেয়ে, কাজের মাঝপথে বসকে আপডেট জানানো ভালো। যদি মনে করেন নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হবে না, তবে আগেই বসকে জানান। এতে তিনি বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারবেন এবং আপনার ওপর বিরক্ত হবেন না।
বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি দিন
বসের মন রক্ষা করতে গিয়ে এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেবেন না যা আপনি রাখতে পারবেন না। নিজের সক্ষমতা বুঝে কাজ নিন এবং ‘না’ বলতে শিখুন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে ব্যর্থ হওয়ার চেয়ে শুরুতে অপারগতা প্রকাশ করা অনেক বেশি পেশাদারিত্বের পরিচয়।
স্বচ্ছ যোগাযোগ বজায় রাখুন
বসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তাকে অন্ধকারে রাখবেন না। স্বচ্ছতা থাকলে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ কমে যায় এবং মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
ক্যারিয়ারে সাময়িক লাভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী সুনাম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সততা হয়তো আপনাকে সাময়িক ভর্ৎসনার মুখে ফেলতে পারে, কিন্তু দিনশেষে এটিই আপনাকে কর্মক্ষেত্রে একজন নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্ববান কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। মনে রাখবেন, দক্ষতা শেখা যায়, কিন্তু সততা ভেতর থেকে অর্জন করতে হয়।




Comments