পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। কখনো এর তীব্রতা বেশি থাকে, কখনো কম। স্থলভাগের পাশাপাশি সমুদ্রের তলদেশেও ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
বৈজ্ঞানিক কারণ
ভূ-তত্ত্ববিজ্ঞান মতে, সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়- ভূপৃষ্ঠজনিত পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং শিলাচ্যুতি বা টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়া।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ
ইসলামি স্কলারদের মতে, ভূমিকম্প শুধুই একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক প্রকার সতর্কবার্তা। যেন মানুষ পাপাচার ছেড়ে তওবা করে, মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং নিজেদের শুধরে নেয়। পবিত্র কোরআনে ‘যিলযাল’ (ভূকম্পন) নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাও নাজিল করা হয়েছে।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে ভূমিকম্পের কারণ ও করণীয় নিচে তুলে ধরা হলো:
আল্লাহর সতর্কবার্তা
মানুষের অপকর্ম ও পাপাচার যখন বেড়ে যায়, তখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাদের সতর্ক করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৫৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৬৫)
সহিহ বুখারিতে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ আয়াতটি নাজিল হলো, তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
মুফাসসির শায়খ ইস্পাহানি (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এর মর্মার্থ হলো, ভূমিকম্প ও ভূমিধসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া।’
সামাজিক অবক্ষয় ও হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী
সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ভূমিকম্পের অন্যতম কারণ হিসেবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। তিরমিজি শরিফের ১৪৪৭ নং হাদিসে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে গচ্ছিত রাখা সম্পদ আত্মসাৎ করা হবে, জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্য হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে, যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রূপে আবির্ভূত হবে সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির, পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া তাসবিহ দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনের জন্য।’
কিয়ামতের আলামত
রাসুল (সা.) ভূমিকম্পকে কিয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে পর্যন্ত না ইলম (দ্বীনি জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং খুনখারাবি বাড়বে (ততদিন কিয়ামত হবে না)। তোমাদের সম্পদ এত বাড়বে যে, উপচে পড়বে।’ (বুখারি, হাদিস: ৯৭৯)
বিপদ যখন হাতের কামাই
বর্তমানে যেসব দুর্যোগ ঘটছে, তা মানুষের পাপ ও অপরাধের ফল। আল্লাহ বলেন, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা: ৩০)। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, সমাজে ব্যভিচার বেড়ে গেলে ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্প হলে করণীয়
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভূমিকম্পের সময় মুমিনের প্রধান কাজ হলো আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
১. তওবা ও ইস্তিগফার: মহান আল্লাহর কাছে দ্রুত তওবা করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন, ‘যদি জনপদের মানুষগুলো ঈমান আনত এবং (আল্লাহকে) ভয় করত, তবে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম।’ (সুরা আরাফ: ৯৬)
২. দোয়া ও জিকির: সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাকে বেশি বেশি স্মরণ করা।
৩. দান-সদকা: দুর্যোগ থেকে মুক্তির জন্য গরিব ও অসহায়দের দান করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দয়া প্রদর্শন করো, তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ)
সর্বোপরি, কালক্ষেপণ না করে আমাদের নিজেদের শুধরে নেওয়া উচিত এবং আল্লাহর কাছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রার্থনা করা উচিত।




Comments