রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকায় ৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ১ জন এবং নরসিংদীতে ২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক এবং ফাটল দেখা গেছে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনায়।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হলেও এর তীব্রতায় জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
ঢাকা ছাড়াও গোপালগঞ্জ, নড়াইল, রংপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, কুমিল্লা, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, সিলেট, ফেনী, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভারতেও এর প্রভাব ছিল বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
ঢাকায় রেলিং ভেঙে পড়ে ৩ জন নিহত:
রাজধানীর বংশালের কসাইটুলী এলাকায় একটি পাঁচ তলা ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে তিন পথচারী নিহত হন। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সময় সংবাদকে জানান, সকাল সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রেলিং ভেঙে পড়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় পথচারীরা রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছেন। আশপাশের মানুষ দৌড়ে এসে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
আতঙ্কে মানুষজন বাসা থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনা ঘটে।
নারায়ণগঞ্জে দেয়াল চাপায় শিশু নিহত:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পের সময় একটি টিনশেড বাড়ির দেয়াল ধসে পড়ে ফাতেমা নামে এক বছর বয়সি শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হন।
নিহত ফাতেমা গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং নিহত-আহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে।’
ভূমিকম্প শুরু হলে কুলসুম বেগম মেয়েকে নিয়ে ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় যাচ্ছিলেন। এসময় রাস্তার পাশে টিনশেড বাড়িটির দেয়াল ভেঙে তাদের ওপর পড়ে। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।
নরসিংদীতে সানশেড ভেঙে পড়ে নিহত ২:
নরসিংদীর সদর উপজেলার গাবতলি এলাকায় ভূমিকম্পের সময় বাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে ওমর (১০) নামে এক শিশু এবং ৭৫ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ নিহত হন। শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ওমরের চাচা জাকির হোসেন বলেন, ‘ভূমিকম্প শুরু হলে দেলোয়ার হোসেন তিন সন্তানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ঠিক তখনই সানশেড ভেঙে পড়ে তাদের ওপর।’
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বাবা ও ছেলেকে ঢামেকে আনা হলে চিকিৎসক ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন। ওমরের দুই বোন নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক বলেন, ‘ভূমিকম্পে বাবা-ছেলেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক ছেলেটিকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবা সংকটাপন্ন অবস্থায় ভর্তি আছেন।’
অপরদিকে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামে ভূমিকম্পে মাটির ঘরের দেয়াল ধ্বসে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধ নিহত হন।




Comments