আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে র‌্যাবের টিএফআই সেলে বিরোধী মতাদর্শের ব্যক্তিদের গুম, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর প্রসিকিউশনের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

দুপুর পৌনে ১২টায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি র‌্যাব টিএফআই সেলে সংঘটিত গুমের ভয়ঙ্কর বিবরণ তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘গুমের অন্ধকার পেরিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক নতুন বাংলাদেশ উদিত হয়েছে।’

তিনি জানান, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য সাধারণত দুইভাবে নির্ধারিত হতো- গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো অথবা বহু বছর গুম রেখে অজানা স্থানে ফেলে দেওয়া। এ ছাড়া তিনি আরও ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।

এর আগে সকাল ১০টার পর সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে ‘বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান’ লেখা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন-  র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরে), র‌্যাব গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

মামলার পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র‌্যাবের সাবেক ডিজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, র‌্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।

মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ২৩ নভেম্বর আজকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেদিনও গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

প্রসিকিউশনের অংশ শেষ হওয়ায় এখন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের শুনানি হবে আগামী ১৪ ডিসেম্বর। তারপর অভিযোগ গঠন বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেবেন।