Image description

শীতের আগমন মানেই ড্রেসিং টেবিলে অনিবার্যভাবে জায়গা করে নেয় গ্লিসারিন। যুগ যুগ ধরে ঠোঁট ফাটা রোধে কিংবা হাত-পায়ের রুক্ষতা দূর করতে এর জুড়ি মেলা ভার। এটি একটি নিরাপদ এবং অত্যন্ত প্রচলিত উপাদান। তবে নিরাপদ হলেও এর ভুল ব্যবহার আপনার ত্বকের উপকারের বদলে বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

চর্ম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্লিসারিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম না মানলে ত্বক ও চুল আরও শুষ্ক ও নির্জীব হয়ে পড়তে পারে। আসুন জেনে নিই, গ্লিসারিন ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি এবং এর পেছনের বিজ্ঞান।

গ্লিসারিন আসলে কীভাবে কাজ করে?
গ্লিসারিন মূলত একটি 'হিউমেকট্যান্ট' জাতীয় উপাদান। এর প্রধান কাজ হলো পরিবেশ থেকে আর্দ্রতা বা পানি শুষে নিয়ে ত্বকে ধরে রাখা। যখন বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতা থাকে, তখন গ্লিসারিন বাতাস থেকে পানি টেনে ত্বকের ওপরের স্তরে জমিয়ে রাখে, ফলে ত্বক নরম ও কোমল থাকে।

সমস্যা যেখানে শুরু হয়
সমস্যাটি তখনই দেখা দেয়, যখন বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায় বা আবহাওয়া অতিরিক্ত শুষ্ক থাকে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি বাতাসে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকে, তবে গ্লিসারিন তার স্বভাববশত পানির উৎস খুঁজতে থাকে। তখন এটি বাতাস থেকে পানি না পেয়ে ত্বকের গভীর স্তর থেকেই পানি টেনে ওপরের স্তরে নিয়ে আসে।

এর ফলাফল হয় ভয়াবহ। ত্বকের ভেতর থেকে পানি বেরিয়ে আসার কারণে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক ও ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, যে শুষ্কতা দূর করতে আপনি গ্লিসারিন মাখলেন, ভুল ব্যবহারে সেটিই ত্বককে আরও খসখসে করে দিতে পারে।

সরাসরি ব্যবহারে সতর্কতা
অনেকেই তাড়াহুড়ো করে বা না জেনে সরাসরি বোতল থেকে গ্লিসারিন নিয়ে ত্বকে বা চুলে মেখে ফেলেন। এটি একেবারেই অনুচিত।

  • ত্বকের ক্ষেত্রে: ঘন গ্লিসারিন সরাসরি ত্বকে মাখলে তা ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে দিতে পারে এবং ধুলোবালি আটকে রাখতে পারে।

  • চুলের ক্ষেত্রে: শুষ্ক চুলে সরাসরি গ্লিসারিন ব্যবহার করলে চুল আরও বেশি ফ্রিজি বা খসখসে হয়ে যেতে পারে। এটি চুলকে ভারী ও আঠালো করে তোলে, যা দেখতেও খারাপ লাগে।

গ্লিসারিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
গ্লিসারিনের উপকারিতা পেতে হলে এটি ব্যবহারের সঠিক কৌশল জানা জরুরি। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের নিয়মগুলো মেনে চললে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব:

কখনোই একা নয়: গ্লিসারিন কখনোই সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করবেন না। এর সঙ্গে গোলাপ জল, সাধারণ পানি, বা কোনো টোনার মিশিয়ে পাতলা করে নিন।

ভেজা ত্বকে ব্যবহার: গোসলের ঠিক পরপরই বা মুখ ধোয়ার পর যখন ত্বক সামান্য ভেজা থাকে, তখন গ্লিসারিন মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। এতে এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

পরিমাণে সচেতনতা: অতিরিক্ত গ্লিসারিন ব্যবহার করবেন না। অল্প পরিমাণে নিয়ে অন্য উপাদানের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করাই শ্রেয়।

লিপবাম বা ক্রিমের সাথে: আপনার নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার বা বডি লোশনের সাথে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে নিলে এর কার্যকারিতা বাড়ে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে না।


গ্লিসারিন নিজে ক্ষতিকর নয়, বরং শীতের রুক্ষতায় এটি আমাদের পরম বন্ধু। কিন্তু বন্ধুত্বের সুফল পেতে হলে এর ব্যবহারের সীমারেখা জানা প্রয়োজন। তাই এই শীতে ত্বক ও চুল ভালো রাখতে গ্লিসারিন ব্যবহার করুন, তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে।