Image description

সকালে ঘুম থেকে উঠে কথা বলতে গিয়ে দেখলেন গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না, কিংবা বের হলেও তা অদ্ভুত শোনাচ্ছে—এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা অনেকেই হয়েছি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘ল্যারিঞ্জাইটিস’ । সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণ, অতিরিক্ত চিৎকার-চেঁচামেচি বা ঠান্ডা লাগলে আমাদের স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংসে প্রদাহ হয়, যার ফলে স্বর বসে যায়।

তবে এই বিড়ম্বনা কাটাতে ওষুধের চেয়ে ঘরোয়া টোটকা এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনই বেশি কার্যকর। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।

লবণ-পানির গার্গল (সবচেয়ে কার্যকর)

গলার খুশখুশে ভাব এবং প্রদাহ কমাতে লবণ-পানির গার্গলের কোনো বিকল্প নেই।

  • করণীয়: এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে অন্তত ৩-৪ বার গার্গল করুন। এটি গলার ফোলা ভাব কমায় এবং মিউকাস পরিষ্কার করে।

আদা-চা বা আদা-মধু

আদায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা গলার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

  • করণীয়: এক কাপ গরম পানিতে কয়েক টুকরো আদা থেঁতো করে ফুটিয়ে নিন। এরপর ছেঁকে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন। মধু গলার ভেতরের শুষ্ক ভাব দূর করে আর্দ্রতা বজায় রাখে। চাইলে এক চামচ মধুর সঙ্গে আদার রস মিশিয়ে সরাসরিও খেতে পারেন।

গরম পানির ভাপ বা স্টিম

গলার স্বর বসে গেলে বাতাস চলাচলের নালীগুলো শুকনো হয়ে যায়। ভাপ নিলে সেই শুষ্কতা দূর হয়।

  • করণীয়: একটি বড় পাত্রে ফুটন্ত গরম পানি নিন। এরপর মাথার ওপর তোয়ালে দিয়ে ঢেকে গরম পানির ভাপ নাক ও মুখ দিয়ে টানুন। পানিতে মেনথল বা ইউক্যালিপটাস তেল মিশিয়ে নিলে আরও দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। দিনে দুবার ১০ মিনিট করে ভাপ নিন।

যষ্টিমধু ও লবঙ্গ

প্রাচীনকাল থেকেই গলার সমস্যায় যষ্টিমধু ব্যবহার হয়ে আসছে।

  • করণীয়: এক টুকরো যষ্টিমধু মুখে রেখে চুষে চুষে রস খেতে পারেন। এছাড়া লবঙ্গ বা গোলমরিচ মুখে রাখলেও গলার ইরিটেশন বা অস্বস্তি কমে আসে।

কণ্ঠনালীর বিশ্রাম (Voice Rest)

আমরা অনেকেই গলা বসে গেলে ফিসফিস করে কথা বলার চেষ্টা করি। এটি একদমই করবেন না।

  • সতর্কতা: ফিসফিস করে কথা বললে স্বরযন্ত্রে (Vocal Cords) স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ পড়ে। তাই গলা বসে গেলে যতটা সম্ভব কথা কম বলুন। কণ্ঠনালীকে পুরোপুরি বিশ্রাম দিন।

যা করবেন না

১. ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম: গলা বসে থাকা অবস্থায় ঠান্ডা পানীয় বা আইসক্রিম পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন। এটি প্রদাহ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
২. ধূমপান: ধূমপান গলার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি গলার টিস্যুকে আরও শুষ্ক করে দেয় এবং সেরে উঠতে দেরি করায়।
৩. ক্যাফেইন: অতিরিক্ত চা বা কফি শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে ফেলে, যা গলার জন্য ভালো নয়। এর বদলে প্রচুর পরিমাণে কুসুম গরম পানি পান করুন।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

সাধারণত ঘরোয়া যত্নে ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে গলার স্বর স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে যদি দেখেন:

  • ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গলার স্বর বসে আছে।

  • গলায় তীব্র ব্যথা বা রক্তপাত হচ্ছে।

  • নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

  • জ্বর বা ঘাড় ফুলে গেছে।

তাহলে দেরি না করে অবশ্যই একজন নাক-কান-গলা (ENT) বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।


গলার স্বর আমাদের ব্যক্তিত্বের অন্যতম অংশ। তাই অবহেলা না করে সামান্য যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় কুসুম গরম পানি পানের অভ্যাসই আপনাকে স্বরভঙ্গের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারে।