Image description

সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীজুড়ে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলা এড়াতে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ধানমন্ডি এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং জনমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে পৌঁছালে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ এলাকায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। এসময় বিক্ষোভকারীরা পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্র রুখতে ব্যর্থতার দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেন। বিক্ষোভে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা ও বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমও সংহতি প্রকাশ করে শামিল হন।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে সড়ক অবরোধ করা হয়। গভীর রাতে কারওয়ান বাজারে অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ ও ‘দ্য ডেইলি স্টার’ কার্যালয়ে হামলা চালায় একদল উগ্র জনতা। ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হলে ভেতরে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী আটকা পড়েন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আটকে পড়া সাংবাদিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এছাড়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এবং ছায়ানট ভবনেও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনী প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান শরিফ ওসমান হাদি। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে হাদির মরদেহ বহনকারী বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। সেখান থেকে তার মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হবে। জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে আবারও বড় ধরনের জমায়েত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।