Image description

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি ও জোট পুনর্গঠনের দৌড়ঝাঁপ তুঙ্গে উঠেছে। বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় ব্যর্থ হওয়া এবং দলটির ওপর ক্ষুব্ধ হওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালী নেতা এখন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ শুরু করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, নতুন মিত্র পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও জামায়াতের বর্তমান ৮ দলীয় শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১০০টি আসনের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অন্তত ২৫টি আসন দাবি করছে। এমনকি প্রত্যাশিত আসন না পেলে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে কয়েকটি শরিক দল। মিত্রদের প্রস্তাব—জামায়াত ১৫০টি আসনে নির্বাচন করুক এবং বাকি ১৫০টি আসন শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হোক।

তবে জামায়াত নেতারা এই প্রস্তাবে সায় দিচ্ছেন না। তারা জানিয়েছেন, তিন দফা চালানো জরিপের ভিত্তিতে আসন সমঝোতা করা হচ্ছে। কয়েকটি মিত্র এমন আসন চাইছে যেখানে তাদের পরাজয় নিশ্চিত, জামায়াত প্রার্থীদের অবস্থা সেখানে ভালো। জামায়াত নেতারা জানান, প্রার্থীর পরিচিতি ও অবস্থান ভালো থাকলে সেই আসন ছাড়তে তারা রাজি। কিন্তু নিশ্চিত পরাজয়ের জন্য আসন ছাড়া যায় না।

জামায়াত সূত্র জানায়, তারা দুই শতাধিক আসনে দলীয় প্রার্থী দেবে। এনসিপি, এবি পার্টিসহ সব মিত্রকে মিলিয়ে ৮০টি আসন ছাড়বে।

গতকাল সন্ধ্যায় জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের বাসায় যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আনুষ্ঠানিকভাবে অসুস্থ জামায়াত নেতাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলা হলেও দল দুটির সূত্র জানায়, সেখানে নির্বাচনী সমঝোতার আলোচনা হয়েছে। আবদুল্লাহ তাহের সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তাদের মধ্যে সৌজন্যমূলক কথা হয়েছে। নাহিদ ইসলামের বক্তব্য সরাসরি পাওয়া না গেলেও তাঁর দলের নির্বাহী পরিষদের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ সদস্য জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতার পক্ষে মত দিয়েছেন।

এনসিপির একাধিক নেতা মিডিয়াকে জানিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে জোটের আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি শুরুতে ৩০টি আসন ছাড়ার কথা বললেও শেষ সময়ে এসে চারটি দিতে চাইছে। গত মাসে এনসিপি, এবি পার্টি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠন করে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ভূঁইয়া মিডিয়াকে বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন বিএনপির জোট ছেড়েছে নতুন ধারার রাজনীতি করতে। কিন্তু জোটের অনেকে এখন আসন সমঝোতার রাজনীতি করছে। জামায়াতের সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন যাবে না।’

জামায়াতের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা মিডিয়াকে বলেন, এনসিপির সারাদেশে ৫-৬ শতাংশ জনসমর্থন থাকলেও সংগঠন না থাকায় এই ভোট তাদের বাক্সে যাবে না। তাই জামায়াত তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহী। এনসিপির সঙ্গে আসা মানে নির্বাচনের মাঠে জুলাইয়ের শক্তিকে পাশে পাওয়া। জামায়াত মনে করে, ইসলামপন্থি আট দল একসঙ্গে থাকলে বিএনপির জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী ভাবধারার রাজনৈতিক বয়ান শক্তিশালী করা যাবে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বিএনপির কাছ থেকে আসন পেলেও দলটির অন্য নেতারা গতকাল জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে জামায়াত জানিয়েছে, দলগতভাবে এলে সমঝোতা করা হবে। অন্যদিকে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রমের এলডিপিকে শুধু একটি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ অলি আহমেদ একক নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। জামায়াত সূত্র জানায়, একজন বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধাকে পাশে পেতে এলডিপির সঙ্গেও সমঝোতা হতে পারে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু মিডিয়াকে বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির লক্ষ্যে তৃতীয় শক্তি হিসেবে অবস্থান নেওয়ার বিরাট সুযোগ এসেছিল। কিন্তু সবাই ক্ষমতার অংশ হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। শিগগির জোটের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।’