দীর্ঘদিন তুলনামূলক শান্ত থাকার পর ইয়েমেনে আবারও নতুন করে সংঘাতের দাবানল জ্বলে উঠেছে। ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাদরামাউত প্রদেশে আমিরাত সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থান লক্ষ্য করে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি আরব। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই সামরিক হস্তক্ষেপের তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী সংবাদমাধ্যম ‘অ্যাডেন ইন্ডিপেনডেন্ট’ জানায়, হাদরামাউতের ওয়াদি নাহবে অবস্থিত ‘হাদরামি এলিট ফোর্সেস’-এর ওপর সৌদি বিমান বাহিনী অন্তত দুটি বড় হামলা চালিয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই হামলার ঠিক একদিন আগেই সৌদি আরব ওই এলাকা থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সরে যাওয়ার এবং দখলকৃত এলাকা ফেরত দেওয়ার চূড়ান্ত আলটিমেটাম দিয়েছিল। আলটিমেটাম অমান্য করায় রিয়াদ এই সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিল।
ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারটি হুথিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকলেও এখন অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) চলতি মাসের শুরুতে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হাদরামাউত ও মাহরা প্রদেশ দখল করে নিলে সৌদি আরবের সাথে তাদের সরাসরি বিরোধ শুরু হয়। যদিও রিয়াদ ও আবুধাবি প্রকাশ্যে বন্ধুত্বের কথা বলে, তবে ইয়েমেনের মাটিতে তাদের সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো এখন একে অপরের মুখোমুখি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত সপ্তাহেই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন যে, এসটিসির এই অগ্রযাত্রা ইয়েমেনকে আবারও খণ্ড-বিখণ্ড করতে পারে এবং ২০১৪ সাল থেকে চলা দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধকে নতুন করে উসকে দিতে পারে। ২০২২ সালের যুদ্ধবিরতির পর ইয়েমেনে যেটুকু স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছিল, সৌদি আরবের এই বিমান হামলা তা বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিল।
ইয়েমেনে গত এক দশকের যুদ্ধে ইতিমধ্যে কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সৌদি আরবের এই নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ ইয়েমেনকে আবারও এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে। রিয়াদ একে ‘স্থিতিশীলতা আনার কৌশল’ বললেও মাঠপর্যায়ে এটি সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলছে।
বর্তমানে পুরো হাদরামাউত অঞ্চলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং যেকোনো সময় আরও বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।




Comments