Image description

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ডিগ্রির চর। এই গ্রামেরই এক ৩২ বছর বয়সী শিক্ষিত যুবক লিয়ন ঢালি ডেইরি ফার্মিংয়ে সফলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আর নিরলস পরিশ্রমে তিনি প্রমাণ করেছেন, গ্রামেই স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। বর্তমানে খামার থেকে সব খরচ বাদে লিয়নের মাসিক নিট মুনাফা থাকছে দেড় লাখ টাকারও বেশি।

পারিবারিকভাবে মাত্র তিনটি গরু পালনের মধ্য দিয়ে লিয়নের পশুপালনে হাতেখড়ি। ২০১৬ সালে মাত্র ৫টি গরু নিয়ে ছোট পরিসরে শুরু করেন ‘রাফসান ডেইরি ফার্ম’। বর্তমানে তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক গরু রয়েছে, যার সিংহভাগই খামারেই উৎপাদিত।

নিজেদের প্রায় ২ একর (২০০ শতাংশ) জমিতে গড়ে তুলেছেন এই সমন্বিত খামার। গরুর খাদ্যের খরচ কমাতে তিনি নিজস্ব জমিতেই চাষ করছেন ভুট্টা, নেপিয়ার, জারা ও পাকচং ঘাস। নিজস্ব ঘাস ও দানাদার খাদ্যের সঠিক সংমিশ্রণে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কমেছে, অন্যদিকে নিশ্চিত হয়েছে গরুর পুষ্টি। ডেইরি ফার্মের পাশাপাশি খামারের পুকুরে চলছে পাঙ্গাস মাছের চাষ। অর্থাৎ দুধ, ফসল ও মাছ তিনটি খাত থেকেই নিয়মিত আয় আসছে এই খামার থেকে।

বর্তমানে লিয়নের খামারে ৯ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। খামারের গাভি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪২০ কেজি দুধ সংগৃহীত হয়। স্থানীয় মিষ্টির দোকানে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করে মাসে তার মোট আয় হয় প্রায় ৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। শ্রমিক মজুরি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয় প্রায় ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ফলে সব খরচ বাদে মাসে তার নিট লাভ থাকছে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা।

সফল এই খামারি জানান, খামারের প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা তিনি নিজেই তদারকি করেন। লিয়ন ঢালি বলেন, “নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের উচিত কেনা গরুর চেয়ে নিজের খামারে বাছুর জন্ম দিয়ে গাভি তৈরির দিকে গুরুত্ব দেওয়া। আর শুধু বিনিয়োগ করলেই হবে না, সরাসরি খামারে সময় দিতে হবে। পরিশ্রম করলে সফলতা নিশ্চিত।”

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হরিশ চন্দ্র বোস জানান, লিয়ন ঢালির খামারটি একটি আদর্শ খামার। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার কারণে সেখানে রোগবালাই নেই বললেই চলে। তিনি নিয়মিত প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শ নেন। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় লিয়নের খামারটিকে একটি রোল মডেল হিসেবে দেখানো হয়।

স্থানীয়দের মতে, লিয়ন ঢালির এই অভাবনীয় সাফল্য শিবচর এলাকার বেকার যুবকদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এমন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।