ইসলামি শরীয়তে জানাজা নামাজ একটি বিশেষ ইবাদত। এটি ‘ফরজে কিফায়া’ অর্থাৎ সমাজের কিছু লোক আদায় করলে বাকিরা গুনাহ থেকে বেঁচে যায়। তবে ব্যক্তিগতভাবে এই নামাজে অংশগ্রহণের রয়েছে অভাবনীয় সওয়াব ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিসে জানাজায় অংশগ্রহণের ফযিলত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে।
এক ‘কিরাত’ সওয়াব অর্জন
জানাজা নামাজে অংশগ্রহণের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো ‘কিরাত’ পরিমাণ সওয়াব। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
‘যে ব্যক্তি কোনো মৃত মুসলমানের জানাজায় সওয়াবের আশায় শরিক হয় এবং জানাজা শেষ হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করে, সে এক 'কিরাত' সওয়াব নিয়ে ফিরবে। আর যে ব্যক্তি জানাজা পড়ে দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, সে দুই 'কিরাত' সওয়াব নিয়ে ফিরবে। প্রতিটি কিরাত হলো ওহুদ পাহাড়ের সমান বিশাল।" (সহিহ বুখারি: ৪৭)
চিন্তা করে দেখুন, মাত্র কয়েক মিনিটের একটি আমলে পাহাড়সম সওয়াব অর্জনের এমন সুযোগ অন্য কোনো ইবাদতে খুব কমই পাওয়া যায়।
মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশের সুযোগ
জানাজা নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য একটি সম্মিলিত দোয়া। হাদিসে এসেছে, যদি কোনো জানাজায় এমন ৪০ জন বা ১০০ জন লোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে না, তবে আল্লাহ তায়ালা মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ মুসলিম)
পরকালের কথা স্মরণ ও অন্তরের কোমলতা
জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ মানুষকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দুনিয়ার চাকচিক্য ও ব্যস্ততার মাঝে আমরা যখন কোনো খাটিয়া সামনে দাঁড়িয়ে জানাজা পড়ি, তখন আমাদের মনে পড়ে যে একদিন আমাদেরও এই অবস্থায় যেতে হবে। এটি মানুষের কঠিন অন্তরকে নরম করে এবং পরকালের পাথেয় সংগ্রহের তাড়না সৃষ্টি করে।
মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ
একজন মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের যে ৬টি মৌলিক অধিকার রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো তার মৃত্যুর পর জানাজায় শরিক হওয়া। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সহমর্মিতা প্রকাশ পায়। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানানো এবং মৃত ব্যক্তির শেষ বিদায়ে পাশে থাকা ইসলামের মহানুভবতার পরিচয়।
দাফন পর্যন্ত অবস্থান করার অতিরিক্ত সওয়াব
অনেকে শুধু জানাজা পড়েই চলে আসেন। কিন্তু জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা এবং মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামানো পর্যন্ত উপস্থিত থাকার সওয়াব দ্বিগুণ। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি দ্বিতীয় ‘কিরাত’ সওয়াব লাভের মাধ্যম।
জানাজায় অংশগ্রহণের কিছু আদব
ওজুসহ পবিত্র অবস্থায় অংশগ্রহণ করা।
জানাজায় কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো। তিন কাতারে দাঁড়ানো মোস্তাহাব।
মৃত ব্যক্তির জন্য আন্তরিকভাবে মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
জানাজা চলাকালীন অপ্রয়োজনীয় কথা বা হাসাহাসি না করা।
জানাজা নামাজ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি জীবিতদের জন্য শিক্ষা এবং মৃতদের জন্য মুক্তি। ব্যস্ততার অজুহাতে এই বিশাল সওয়াব থেকে আমাদের বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। যখনই জানাজার সংবাদ আসবে, সম্ভব হলে সওয়াবের নিয়তে শরিক হওয়া প্রতিটি মুমিনের লক্ষ্য হওয়া উচিত।




Comments