অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সম্ভবত শেষবারের মতো একসঙ্গে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দুই কিংবদন্তি অপরাজিত ১৬৮ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়ে ভারতকে এনে দিলেন এক দারুণ জয়। দর্শকে ঠাসা স্টেডিয়ামে তাঁদের এই পারফরম্যান্স ছিল স্মৃতিময় এক সমাপ্তি।
২০০৮ সালে সিবি সিরিজের প্রথম ফাইনালে তরুণ রোহিত শর্মা সিডনিতেই প্রথম আলো ছড়িয়েছিলেন। সেদিন শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে ২৪০ রান তাড়া করতে গিয়ে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। সেই সিডনিতেই এবার নিজের ৩৩তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ভারতের অধিনায়ক। ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা রোহিত বললেন, “সব সময়ই অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে ভালো লাগে। ২০০৮ সালের সুন্দর স্মৃতি আছে এখানে। এই ইনিংস দিয়ে শেষ করতে পারা দারুণ অনুভূতি। জানি না, আর কখনও অস্ট্রেলিয়ায় আসব কি না, তবে এত বছর ধরে এখানে খেলাটা ছিল আনন্দের। ভালো-মন্দ অনেক স্মৃতি আছে, তবে সবকিছুর উপরে থাকবে মাঠের ক্রিকেট।”
রোহিত ও কোহলি এখন কেবল ওয়ানডে ফরম্যাটই খেলেন। ফলে ম্যাচ খেলার সুযোগ সীমিত। তবু রোহিত জানালেন, তাঁরা দু’জনই এখনো খেলার আনন্দে ভাসছেন, “আমরা ক্রিকেট উপভোগ করছি। যেসব অর্জন করেছি, সেগুলো তো আছেই, কিন্তু সুযোগ পেলেই নতুনভাবে শুরু করাটাই আসল। পার্থে আসার পর থেকেই ভেবেছি—আগের ১৫-১৭ বছর ভুলে গিয়ে নতুনভাবে শুরু করব। এভাবেই আমি খেলাটাকে দেখি, আর কোহলির ক্ষেত্রেও একই।”
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের শুরুটা কোহলির জন্য ছিল কঠিন—একদিনের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো পরপর দুই ইনিংসে শূন্য রানে আউট। তবে শেষ ম্যাচে রোহিতের সঙ্গী হয়ে পুরনো ছন্দে ফিরলেন তিনি। ফিফটি করে দলকে জেতালেন, মাঠে নামলেন ‘ভিনটেজ’ কোহলি রূপে।
“সত্যি বলতে মুক্তি পেয়েছি,” দর্শকদের উল্লাসের মাঝে বললেন কোহলি। “আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত রান করেও কখনো কখনো মনে হয়, এক রান করতেও জানি না। এই খেলা এমনই। এ কারণেই আমরা ব্যাটিং ভালোবাসি—যখন ফর্ম থাকে না, তখন ছন্দ ফিরে পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রোহিত যখন অপর পাশে থাকে, তখন সহজ হয় স্ট্রাইক ঘোরাতে। আমরা দু’জন একে অপরের খেলা খুব ভালো বুঝি। তাই আবারও এমন বড় জুটি গড়া বিশেষ অনুভূতি।”
এই জুটির রান এখন ৫,৪৮৩—যা কুমার সাঙ্গাকারা ও তিলকারত্নে দিলশানের জুটিকেও ছাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তারা ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি, টেন্ডুলকার-গাঙ্গুলী এবং সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের ঠিক পেছনে।
কোহলি বললেন, “খুব ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল অসাধারণ। পরিস্থিতি বুঝে নিজের খেলা মানিয়ে নেওয়াটাই আমাদের শক্তি। ২০১৩ সালের অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই আমরা বড় বড় পার্টনারশিপ গড়া শুরু করি। তখন থেকেই প্রতিপক্ষ জানত—এই দু’জন যদি ২০ ওভার একসঙ্গে থাকে, তাহলে যেকোনো লক্ষ্যই সম্ভব।”
দুই কিংবদন্তী এরপর ডিসেম্বরে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে খেলবেন।




Comments