কার্গো ভিলেজে আগুন: মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যে ১৫ মিনিটের ফারাক

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার দুপুরে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যে আগুন নেভানো হয় রাত ৯টা ১৮ মিনিটে। কিন্তু আগুন লাগার সময় নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসের বক্তব্যে ১৫ মিনিটের ব্যবধান রয়েছে। এছাড়া, ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টরা ফায়ার সার্ভিসের দেরিতে আগমনে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং নিরাপত্তা জটিলতায় গাড়ি আটকে রাখার অভিযোগ তুলছেন।
মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের দাবি, তারা ২টা ৩০ মিনিটে খবর পায় এবং প্রথম ইউনিট ২টা ৫০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ হিসাবে আগুন লাগার অন্তত ৩৫ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের আগমন হয়। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের অভিযোগ, এত দেরিতে পৌঁছার কারণে আগুন অনেকখানি ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ৮ নম্বর গেটে নিরাপত্তা জটিলতায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কিছুক্ষণ আটকে রাখা হয়।
আগুনের সূত্রপাত কুরিয়ার গুদাম থেকে
কার্গো কমপ্লেক্সের আমদানি পণ্যের অংশে লাগা আগুনের সূত্রপাত ঘটে ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার ডিএইচএল-এর 'খাঁচা' থেকে বলে জানা গেছে। 'এ ওয়ান গ্রুপ' সিঅ্যান্ডএফ এবং লজিস্টিক সেবাদানকারী সংস্থার পরিচালক ইমরান হোসেন বলেন, “কুরিয়ার গুদামে ২৫-৩০টি সার্ভিসের খোপ-খোপ করে জায়গা দেওয়া। ডিএইচএল-এর খাঁচা থেকে আগুন শুরু হয়। কিন্তু লোকজন নেভাতে গেলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। চুরির ভয়ে বা বিস্ফোরক-কেমিকেলের কারণে সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়।” তিনি দাবি করেন, আগুন ২টার আগেই লেগেছে।
অন্যান্য সূত্রে বলা হয়েছে, স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনের গুদাম থেকে আগুন শুরু হয়ে ডিএইচএল-এ ছড়ায় এবং পরে 'ডেঞ্জারাস গুডস' গুদামে পৌঁছে। শনি-শুক্র সরকারি ছুটির দিনে কার্গোতে ভিড় কম থাকলেও লোডিং-আনলোডিং চলছিল। বিমান বাংলাদেশের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কর্মীরা বলেন, ২টার পর অ্যালার্ম বাজে এবং নেভাতে গেলে বিস্ফোরক-অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। এক কর্মী নাম গোপন রেখে বলেন, “গুদামে ক্যামেরা লাগানো, সেখানে সবকিছু ধরা পড়বে।”
দেরির অভিযোগে ক্ষোভ
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের দেরি নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। শাহজালাল বিমানবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম ভুইয়া মিঠু বলেন, “২টার দিকে আগুন লাগে। শ্রমিক-আনসাররা সবাইকে সরিয়ে দেয়, বলে বিস্ফোরণের ভয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ৮ নম্বর গেটে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, অনুমতির জটিলতায় ঢুকতে পারে না।”
ডিএইচএল-এর কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সাকিব জানান, আগুন বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাননি। আগুনের ধোঁয়ায় বিমান চলাচল সাময়িক স্থগিত হয়েছে বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
বেসামরিক বিমান চলাচল উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “ফায়ার সার্ভিসকে বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, খতিয়ে দেখব।” ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, “আমরা ২টা ৩০-এ খবর পাই। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢোকার নিয়ম মেনে চলতে হয়। এরকম কিছু শুনিনি।”
মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দরের সমন্বিত পদক্ষেপে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কোনো নিহত নেই।” আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৩১-৩৬টি ইউনিটসহ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী যোগ দিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কর্তৃপক্ষ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।
Comments