শ্রীমঙ্গল শ্রীশ্রী জগতবন্ধু আশ্রমে ‘অন্নকূট পূজা’ অনুষ্ঠিত
প্রায় সাড়ে পাঁচশো কেজি চাল দিয়ে রান্না করা হয়েছে ভাত, আর তার চারপাশে সাজানো হয়েছে পাঁচ শতাধিক তরকারি, মিষ্টান্ন ও নানা ফলমূল। ভাত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এক বিশাল ‘অন্নপাহাড়’, যার চারপাশে প্লাস্টিক ও মাটির বাসনে সাজানো রঙিন নিরামিষ খাবার।
এই বিশাল আয়োজন উৎসর্গ করা হয় দেবতার উদ্দেশ্যে, পরে প্রায় দশ হাজার ভক্তের মাঝে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়।
বুধবার ২২ অক্টোবর দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উত্তরসুর এলাকার শ্রীশ্রী জগতবন্ধু আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গভীর শ্রদ্ধা ও আনন্দঘন পরিবেশে পালন করছেন এই অনন্য উৎসব। তারা একে ‘গোবর্ধন পূজা’ বা ‘অন্নকূট উৎসব’ নামে ডাকেন।
পুরোহিত রজত চক্রবর্তী বলেন, অন্নকূট উৎসবের পেছনে রয়েছে এক প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনি। সেই কাহিনি অনুসারে, বৃন্দাবনবাসীরা ভালো বৃষ্টির আশায় দেবরাজ ইন্দ্রের পূজা করতেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের বলেন, “এই অন্ন ইন্দ্রকে নয়, বরং শিশুদের খাওয়াও, গরিব মানুষের ভাগে দাও।” কৃষ্ণের উপদেশে বৃন্দাবনবাসীরা ইন্দ্রপূজা বন্ধ করলে ক্রুদ্ধ ইন্দ্র নেমে আনেন প্রবল বর্ষণ।
বৃষ্টি থেকে মানুষ ও গবাদিপশুদের রক্ষা করতে শ্রীকৃষ্ণ আঙুলের ডগায় তুলে নেন গোবর্ধন পর্বত। সাত দিন ও সাত রাত ধরে সেই পর্বত ধরে রাখেন তিনি, যতক্ষণ না ইন্দ্র নিজের ভুল স্বীকার করে বৃষ্টি বন্ধ করেন। তখন বৃন্দাবনবাসীরা একত্র হয়ে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে বিভিন্ন খাবার দিয়ে পাহাড়ের আকৃতি তৈরি করেন। সেই খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় ‘অন্নকূট পূজা’।
‘অন্ন’ মানে ভাত, আর ‘কূট’ মানে পাহাড় — সেই থেকে এই উৎসবের নাম হয় অন্নকূট, যা আজও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে ঐক্য, কৃতজ্ঞতা ও ভক্তির প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।


Comments