দীর্ঘ পাঁচ বছর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) পানির সকল রিজার্ভ ট্যাংক পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রিজার্ভ ট্যাংক ও প্লাস্টিক ট্যাংকের পরিষ্কারের কাজ।
জানা যায়, রিজার্ভ ট্যাংকগুলোর মধ্যে ৭টি ভূগর্ভস্থ এবং ১টি প্রশাসনিক ভবনের ছাদে অবস্থিত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের ছাদে রয়েছে প্রায় ৯০টির বেশি প্লাস্টিকের ("গাজী" ব্র্যান্ড) পানির ট্যাংক। ট্যাংকগুলোর ধারণক্ষমতা কয়েক লাখ লিটার।
প্রকৌশল দপ্তরের কয়েকজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা বহুবার ট্যাংক পরিষ্কারের আবেদন করেছি, কিন্তু বাজেট সংকটের অজুহাতে বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। একবার পরিকল্পনা করা হলেও পরে সেটিও বাস্তবায়িত হয়নি।’
শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা যায়, ‘ব্রাইট ক্লিন’ নামে একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডসহ বিভিন্ন জীবাণুনাশক রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে ট্যাংকগুলো পরিষ্কার করছে। ট্যাংক থেকে বেরিয়ে আসছে লালচে রঙের আয়রন, জমে থাকা কাদা-মাটি ও অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক ভবন, রফিক ভবন, ইউটিলিটি ভবন এবং শিক্ষকদের ডরমেটরির চারটি রিজার্ভ ট্যাংক পরিষ্কার সম্পন্ন হয়েছে। আজকের মধ্যেই আরও দুই থেকে তিনটি ট্যাংক পরিষ্কার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই কার্যক্রমের সার্বিক দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, ‘ছুটির দিনগুলোতে পানির ট্যাংক পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মদিবসে পানির ব্যবহার বেশি হওয়ায় তখন পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। আজকের পর পরশু দিনও কাজ চলবে। লক্ষ্য, সব ট্যাংক ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা।’
৫ বছর ধরে পানির ট্যাংক পরিষ্কার না করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহন খন্দকার বলেন, ‘প্রায়ই পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়, অনেক সময় তাতে ময়লা দেখা যায়। এতে রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন এই পানি দিয়ে খাওয়া, ধোয়া-মোছা সব কিছু করি। অনেক শিক্ষার্থী খাওয়ার পানি বাসা বাড়িতেও নিয়ে যায়। অথচ বছরের পর বছর ট্যাংক পরিষ্কার না হওয়া খুবই উদ্বেগজনক।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘প্রতি ছয় মাস পর পর পানির ট্যাংক পরিষ্কার করা না হলে তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। অপরিষ্কার পানিতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবী জন্ম নেয়, যা ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস (হেপাটাইটিস) ও বিভিন্ন চর্মরোগের কারণ হতে পারে।’
এর আগে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াসউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অবগত নন বলে জানান। তাৎক্ষণিকভাবে রেজিস্ট্রার নিজেই প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দীন পাটোয়ারীকে ফোন দিয়ে পানির ট্যাংক সংখ্যা ও সর্বশেষ পরিষ্কারের সময় জানতে চাইলে তিনিও কিছু জানেন না বলে প্রতিউত্তর দেন। তবে রেজিস্ট্রার দ্রুতই পরিষ্কারে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দেন।
অবশেষে সমালোচনার মুখে সহকারী প্রকৌশলী ওয়ালিউল ইসলামের নেতৃত্বে শনিবার থেকেই শুরু হয় ট্যাংক পরিষ্কার কার্যক্রম।
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর একটি অনলাইন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
Comments