Image description

রাজধানীর উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এতে কমপক্ষে ৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের সংলগ্ন সড়কে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একদল দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পেটাচ্ছে। আহত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলার পেছনে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। তারা জানান, হামলার আগে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।

জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এ ধরনের হামলা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে দমাতে পারবে না।

ঘটনার বিবরণ

ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশের সড়কে। মোবাইল ফুটেজে দেখা যায়, একদল ব্যক্তি লাঠি, রডসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ৬ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। আহতদের দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আহত শিক্ষার্থীদের একজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, “আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ছাত্রলীগের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা আগে থেকেই আমাদের ফোনে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি দিচ্ছিল।”

প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ

হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উত্তরা এলাকায় রাতভর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, তারা হামলাকারীদের শনাক্ত করতে কাজ শুরু করেছেন এবং দ্রুত তাদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন।

এ ঘটনায় জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এক বিবৃতিতে বলেন, “এই হামলা আমাদের আন্দোলনকে দমন করার একটি ষড়যন্ত্র। আমরা দাবি করছি, দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, এবং এ ধরনের সহিংসতা আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।”

পটভূমি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গতি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও সভা-সমাবেশ করে আসছে। তবে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে।

ছাত্রলীগ, যিনি সরকারের একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন, পূর্বেও এ ধরনের হামলার অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে। সংগঠনটি বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও, তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

সমাজে প্রভাব

এই হামলার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে এ ঘটনাকে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন দমনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও সংগঠন তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এ ধরনের হামলা শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর নয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপরও আঘাত। আমরা চাই, দায়ীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়া হোক।”

পরবর্তী পদক্ষেপ

পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, তারা সিসিটিভি ফুটেজ এবং মোবাইল ফুটেজ পর্যালোচনা করে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীরা আগামী দিনগুলোতে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন।