Image description

হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভার ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূতভাবে আনুতোষিক তহবিল থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পৌরসভার ২৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী লিখিত অভিযোগ করলেও দীর্ঘ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাসেম। এতে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন—পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এম আমিনুল ইসলাম, হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা হীরেন্দ্র চন্দ্র পাল এবং উচ্চমান সহকারী রনি চন্দ্র বণিক। 

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, এম আমিনুল ইসলাম ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, হীরেন্দ্র চন্দ্র পাল ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা এবং রনি চন্দ্র বণিক ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নিয়ম ভেঙে তারা আনুতোষিক তহবিলের শতভাগ টাকা তুলে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছেন। অভিযোগকারীরা বলছেন, অনুমোদনবিহীন অর্থ অপসারণ এক ধরনের চুরি। শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে পৌরসভার বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, ইজারা বাণিজ্য ও অন্যান্য তহবিল আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে।

পৌরসভার টিকাদান সুপারভাইজার পল্লবী বণিক বলেন, “এভাবে কর্মকর্তারা নিজেদের সুবিধামতো টাকা তুলে নিলেও সাধারণ কর্মচারীদের লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। অভিযোগ করেও আমরা বিচার পাচ্ছি না।” 

অভিযোগকারীরা আরও দাবি করেন, অভিযুক্ত হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা হীরেন্দ্র চন্দ্র পাল কুলাউড়া পৌরসভায় দায়িত্ব পালনের সময়ও তহবিলের অর্থ আত্মসাধের এই ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, “এটাকে আত্মসাৎ বলা যাবে না, আমরা আমাদের প্রাপ্য নিয়েছি। বিষয়টি ইউএনও স্যার দেখছেন।” 

হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা হীরেন্দ্র চন্দ্র পাল মন্তব্য করতে রাজি হননি। উচ্চমান সহকারী রনি চন্দ্র বণিককে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগকারী কর্মকর্তাদের দাবি, সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পৌর প্রশাসক জাহিদ বিন কাসেম ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ, এর পেছনে ঘুষ বা ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকতে পারে।

এ বিষয়ে মাধবপুর রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বলেন, “পৌর তহবিলের অর্থ ইচ্ছেমতো খরচ করা হচ্ছে। দৃশ্যমান চুরি হলেও প্রশাসক ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, বরং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।বিভিন্ন দালালদের সাংবাদিকের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছেন ”

যোগাযোগ করা হলে প্রশাসক ও ইউএনও জাহিদ বিন কাসেম মানবকন্ঠ প্রতিবেদক'কে বলেন, “টাকা সরিয়ে নেওয়ার বিষয় তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনী ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে। এবং আমরা যখন জানতে পেরেছি তখন থেকে পৌর তহবিল বন্ধ রেখছি, বর্তমানে বন্ধও রয়েছে। 

অন্যদিকে হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক এরশাদ আলী বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তবে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে দুদকে অভিযোগ করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, কর্মকর্তাদের এ ধরনের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের কারণে পৌরসভার আর্থিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং জনসেবার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসকের নীরব ভূমিকায় জবাবদিহিতার অভাব আরও প্রকট হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত আদায়ের দাবি জানিয়েছেন।