
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মনে সুস্থতার আশার চেয়ে ছাদ ধসে প্রাণহানির ভয় বেশি কাজ করছে। জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ থেকে নিয়মিত পলেস্তারা খসে পড়ছে, কখনো কখনো রোগীদের বিছানায়ও পড়ছে এসব ধ্বংসাবশেষ। এমনকি রোগী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মনে প্রথম প্রশ্নই উঠছে, “ছাদ ধসে যদি প্রাণ যায়?”
বীরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের জন্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই একমাত্র নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা কেন্দ্র। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন, আর ইনডোরে ভর্তি থাকেন ৪০ থেকে ৫০ জন। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক রোগীর সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন মাত্র চারজন চিকিৎসক। চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি জরাজীর্ণ ভবন এখন রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের স্বজন মোছাঃ জোহরা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার মা এখানে ভর্তি আছেন। কিন্তু প্রতিদিন ভয়ে থাকি। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। হঠাৎ মাথায় পড়লে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রোগীকে এখানে রাখা মানে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া।”
একইভাবে ভর্তি রোগী মুনিরা বেগম বলেন, “পাঁচ দিন ধরে এখানে চিকিৎসাধীন আছি। কিন্তু ছাদের অংশ মাঝেমধ্যে শরীরের ওপর পড়ে। যদি মাথায় লাগে, তাহলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।”
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোস্তাক বলেন, “এটি উপজেলার একমাত্র হাসপাতাল। এখানে নিরাপদ না থাকলে মানুষ চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবে? অবিলম্বে হাসপাতালের সংস্কার প্রয়োজন।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজ সুলতানা হাসপাতালের দুরবস্থা স্বীকার করে বলেন, “মহিলা ওয়ার্ডের ছাদ থেকে বারবার পলেস্তারা খসে পড়ছে। এতে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা চরম ঝুঁকিতে আছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সংস্কার না হলে মহিলা ওয়ার্ডটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে।”
জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আশির দশকের শুরুতে প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ভবনের কোনো বড় ধরনের সংস্কার হয়নি। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পাশাপাশি দেয়াল ফেটে গেছে, বাথরুমগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। রোগীর চাপ বাড়লেও চিকিৎসক ও অবকাঠামোর উন্নতি না হওয়ায় সেবা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে হাসপাতালের জরাজীর্ণ ভবন সংস্কার ও নতুন অবকাঠামো নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এই হাসপাতাল যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে, তাহলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার শেষ ভরসাস্থলটিও হারিয়ে যাবে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
Comments