
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে আনন্দময়ীর নিদ্রাভঙ্গের মাধ্যমে যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, বিজয়া দশমীর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটল। বৃহস্পতিবার সকালে বিহিত পূজা, পুষ্পাঞ্জলি এবং শান্তির জল ছিঁটানোর পর ভক্তরা দর্পণ বিসর্জন করেন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, নবমী পূজা শেষে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোক ত্যাগ করে নিজালয়ে ফিরে যান। দশমীর দর্পণ বিসর্জন এই যাত্রারই প্রতীকী বিদায়। এরপর বিভিন্ন মণ্ডপে দেবীকে তেল, সিঁদুর, পান এবং চিনি দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়। আগামী বছরের অপেক্ষায় থেকে দুর্গতিনাশিনী দেবীকে বিদায় জানানোর এই প্রথা ভক্তদের কাছে এক আবেগঘন মুহূর্ত।
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিবছরের মতো এবারও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ছিল বিসর্জনের প্রধান কেন্দ্র। এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট, অভয়মিত্র ঘাট এবং বিভিন্ন এলাকার পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। দুপুরের পর থেকেই ট্রাকে করে দেবী দুর্গার প্রতিমা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নিয়ে আসা হয়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব, পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। পতেঙ্গা অভিমুখে যাওয়া সড়কগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও পুলিশি প্রহরা ছিল।
বিকালে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিসর্জন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি জানান, "বিসর্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিসর্জন শেষ করতে বলা হলেও, এরপরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় থাকবে।"
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিখিল কুমার নাথ জানান, "বেলা সাড়ে ১২টার পর থেকে পতেঙ্গায় বিসর্জন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে আসা ভক্তদের সহায়তা করতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।" তিনি আরও জানান, নগরীর ২৯২টি পূজার মধ্যে শতাধিক মণ্ডপের বিসর্জন পতেঙ্গায় হবে। বাকিগুলো কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট, কালুরঘাট, পারকি সৈকত এবং স্থানীয় পুকুরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পূজা কমিটির হিসাব অনুযায়ী, এ বছর নগরীতে ২৯২টি এবং জেলার ১৬ উপজেলায় ১,৫০৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও অনেক ঘট পূজাও হয়েছে।
বাঙালি হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবী দুর্গা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রতীক, একইসাথে তিনি 'মাতৃরূপেণ' এবং 'শক্তিরূপেণ'। গত ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছিল, যা আগামী ৬ অক্টোবর কোজাগরী পূর্ণিমার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে। শাস্ত্র মতে, দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যে এসেছিলেন, যা শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে। তিনি ফিরে যাচ্ছেন দোলায় (পালকি) করে, যা মহামারী বা বড় ধরনের বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করতে পারে।
Comments