Image description

শিক্ষা ও আলোকিত সমাজ গঠনের অন্যতম হাতিয়ার পাঠাগার কিন্তু পাইকগাছা উপজেলার একমাত্র সরকারি পাঠাগারটি আজ জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এক সময় এ পাঠাগারে বই পড়তে ভিড় জমাতেন ছাত্র-ছাত্রী চাকরিপ্রার্থী ও সাধারণ পাঠকরা। এখন মাত্র হাতে গোনা ৫/৬ জন চাকরি প্রত্যাশীরা এই লাইব্রেরীতে আসেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হয়তো নিভে যাবে পাইকগাছা উপজেলার একমাত্র পাঠাগার। অযত্ন-অবহেলায় জরাজীর্ণ উপজেলা পাঠাগার, জ্ঞান চর্চার বাতিঘর আজ নিভু নিভু।

বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের বেশি আগ্রহী, ফলে প্রযুক্তিহীন লাইব্রেরী তাদের কাছে কম আকর্ষণীয়। ডিজিটাল লাইব্রেরী থাকলে পাঠক সহজেই ই-বুক প্রবন্ধ ও গবেষণা ডাটাবেজ ব্যবহার করতে পারতো। এছাড়াও তথ্য সংগ্রহের অনেক সময় নষ্ট করতে হয়। কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তি থাকলে সময় কম লাগে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার একটি আধুনিক লাইব্রেরীর অপরিহার্য অংশ প্রযুক্তিহীন লাইব্রেরী আজকের যুগে সীমাবদ্ধ অকার্যহীন হয়ে পড়ছে তাই শিক্ষা গবেষণায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে লাইব্রেরির ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ জরুরি।

স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে পাঠাগারটি কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে। একসময়ের জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র এখন কেবল মাত্র নামেই টিকে আছে। প্রত্যেক বছর এই পাঠাগারের জন্য সরকার কর্তৃক একটি বাজেট দেওয়া হয় সে বাজেট কি আদৌ কাজ হয়!

স্থানীয় বিজয় সানা জানান, কয়েকবছর আগেও এই লাইব্রেরীতে বহু ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করার জন্য আসতো। এখন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, স্যোশাল মিডিয়া, নতুন কালেকশন, প্রচার প্রচারণা এই লাইব্রেরীতে না থাকার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে। তিনি আরও বলেন পাঠাগারকে সচল করতে হলে অবিলম্বে ভবন সংস্কার নতুন বই সংযোজন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা চালু করতে হবে নইলে তরুণ প্রজন্ম বই থেকে আরও দূরে সরে যাবে।

এখন পাঠাগারটি ধুলোবালি আর অযত্ন অবহেলার চিত্র বহন করছে। পাঠাগারের ভবন ফেটে পানি পড়ে, জানালা, দরজায় ভাঙা, নষ্ট সব মিলিয়ে এখানে বসে বই পড়া যেন কষ্ট কার কাজ। এছাড়াও নতুন বই যোগ না হওয়ায় পাঠকের আগ্রহ কমে গেছে। যে কয়জন পাঠক আসেন তারাও নিরাশ হয়ে ফিরে যান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব এবং কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহের কারণে পাঠাগারটি পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। পাঠাগারটিতে সঠিক পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা না থাকায় সেখানে প্রায় বখাটেদের আনাগোনা দেখা যায়, এমনকি মাদকাসক্তদের উপস্থিতি ও পাঠাগারে স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়রা মনে করেন প্রশাসনের উদ্যোগে পাঠাগারে নিয়মিত তদারকি, নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ এবং তরুণ প্রজন্মকে বহুমুখী করার মত কার্যক্রম চালু করলে পাঠাগার আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে।

চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার সুমি বলেন, একটি উপজেলায় লাইব্রেরী থাকলে অনেক গরিব শিক্ষার্থী লাইব্রেরী থেকে পড়াশোনা করতে পারেন। অনেকের বই কেনার সামর্থ্য নেই, যার কারণে অনেক সময় তাঁদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে উপজেলার লাইব্রেরীতে নতুন নতুন কালেকশন থাকলে সকলে সুবিধা পাবেন।

নিয়মিত পাঠকরা অভিযোগ করেন, বর্তমানে পাঠাগারের অবস্থা জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাথরুমের দরজা-জানালা নষ্ট এবং বাথরুমে বসার কোন পরিবেশ নেই। লাইব্রেরীর সামনে অর্থাৎ প্রধান সড়কের সহ ভিতরে পথচারী সহ অন্যান্যরা প্রসাব করে। এছাড়াও এ লাইব্রেরীতে খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই। যেখানে একাধিক পত্রপত্রিকা থাকার কথা সেখানে হাতে গোনা দুই থেকে তিন টা পত্রিকা দেন কিন্তু সেটাও নিয়মিত না। এই লাইব্রেরীতে বখাটেদের আনাগোনা বেশি এটা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে পাঠক কমে যাবে। তারা আরও জানান প্রধান সড়কের উপরে যানবাহন রাখেন এটা বন্ধ করার দাবি জানান উক্ত লাইব্রেরীর সংশ্লিষ্ট পাঠকরা।

শিক্ষাবিদদের মতে উপজেলার পাঠাগারটি আজ প্রয়োজন শুধু একটু উদ্যোগ,একটু যত্ন আর ফিরে দেখা আমাদের সেই পাঠাগারের দিকে, যে পাঠাগার একদিন গড়ে তুলেছিল জ্ঞানী সচেতন ও মানবিক প্রজন্মকে।

পাইকগাছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, উপজেলার এই পাঠাগারটি এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সর্বপ্রথম এটাকে সংস্কার করতে হবে। এই লাইব্রেরীতে বর্তমানে পাঠকের সংখ্যা নেই বললে চলে। একটা সময় দেখেছি এই লাইব্রেরীতে পাঠকরা ভিড় জমাতো কিন্তু এখন আর দেখা যায় না। কারণ উন্নত প্রযুক্তির যুগে এখন সকলের কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন রয়েছে। ইচ্ছা করলে ফোনের মাধ্যমে সব দেখতে পায়। তবে লাইব্রেরীটা দ্রুত সংস্কার করে পাঠকের আকৃষ্ট করতে হবে। একটা সময় দেখেছি সেখানে অনেক পত্রিকা পাওয়া যেতো। পাঠকরা পত্রিকা এবং চাকরি প্রত্যাশীরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতেন লাইব্রেরীতে এসে কিন্তু এখন বন্ধ রয়েছে সব। দুই একটা পত্রিকা নেওয়া হয় লাইব্রেরীতে সব ধরনের পত্রিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং নতুন নতুন বই যোগ করতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে আবারো পাঠকরা এই লাইব্রেরীতে আসবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা এ প্রতিনিধিকে জানান, আমি অনেক আগে দেখেছি এই লাইব্রেরীতে অনেক পাঠক আসতো কিন্তু এখন মাত্র কয়েকজন পাঠক আসেন। এখন কেন পাঠকরা এই লাইব্রেরীতে কম আসে, সেটা আমাদের আগে খুঁজে বের করতে হবে। পাঠকের চাহিদা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

এখন উন্নত প্রযুক্তির যুগে সব কিছু মানুষ খুব সহজেই মোবাইল, কম্পিউটারে দেখতে পাচ্ছেন। পাঠকরা চাইলে তারা মূহুর্তের মধ্যে গুগলের মাধ্যমে সার্চ করে পড়তে পারেন। এই লাইব্রেরীতে যদি ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে নতুন প্রজন্মের জন্য সুবিধা হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভালো এবং খারাপ দিক দুটোই আছে কিন্তু সবাই আর খারাপ দিকে যাবে এমন তো না।  সবসময় খারাপ দিক নিয়ে না ভেবে ভালো দিক নিয়ে ভাবা উচিত। তিনি আরো বলেন ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি নতুন নতুন বইয়ের সাথে পাঠকের পরিচয় করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, আমরা পাঠাগারের কার্যক্রম পুনর্জীবিত করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। পাঠাগার কেবল বই রাখার স্থান নয় এটি মানুষের চিন্তা চেতনা ও মানবিকতার বিকাশের জায়গা। উপজেলার পাঠাগারের অবস্থা উন্নয়নের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনের নতুন বই, আসবাবপত্র,  ডিজিটাল সুবিধার সংযোজন এর উদ্যোগ নেওয়া হবে। যাতে তরুণরা বইয়ের গন্ধে ফিরে আসে। পাশাপাশি পাঠাগারটি সিসি ক্যামেরার আওয়াতায় এনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।