নবীনগরে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকা সহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পুলিশের নির্যাতনে হত্যা, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি এবং পথচারীরা বারবার চুরি-ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। এতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বার নবীনগর থানাধীন সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে মিথ্যে চুরির অভিযোগে আব্দুল্লাহ(২৭) নামে এক যুবককে হাত-পায়ের নোখ, কপালের চামরা তুলে টানা চারদিন নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করেন পুলিশ। এঘটনার পর প্রশাসন ওই ফাঁড়ি থানাটি বন্ধ ঘোষনা করেন। পরে পাঁচদিন পর সেনাবাহীনির সহযোগিতায় পুনরায় ফাঁড়ি থানাটি চালু করা হয়।
গত ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার উপজেলার বিটঘর ইউনিয়নের মহশেপুর গ্রামে গভীর রাতে উমর হাসান (২৪)কে জবাই করে হত্যা করে তার সহপাঠূী বন্ধু খাইরুল আমিন(২৫) নামে এক যুবক। পরে হত্যাকারী যুবক হত্যার দায় স্বিকার করে নবীনগর থানায় আত্মসমর্পন করেন।
গত ১৪ অক্টোবর রাতে নবীনগর পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডে প্রবাসী শরিফ মিয়ার ঘরে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ডাকাত দল প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধর করে ঘরের তালা ভেঙ্গে নগদ ৭ লাখ টাকা, চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোনসহ প্রায় লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার লাউর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে নিখোজ হন ফারজানা আক্তার জুঁই নামে এক কলেজ ছাত্রী। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এলাকায় অনেক খুঁজাখুজি করলেও তার কোন সন্ধ্যান মিলেনি। ঘটনার দু’দিন পর বাড়ির পাশের পুকুর থেকে ওই কলেজ ছাত্রীরর লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
এছাড়াও গত ২১ সেপ্টেম্বর নবীনগর পৌর এলাকা থেকে একটি পিস্তলসহ ১০ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়। গত দুমাস যাবত এসব হত্যা, চুরির, ডাকাতি, ছিনতাই, গ্রাম্য মারামারির মত ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু এসব ঘটনার পরও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
এছাড়া চলতি মাসে নবীনগর পৌর সদর ও উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম থেকে কয়েকটি মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
নবীনগর সদর বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী বলেন, নবীনগর উপজেলা হলো এখন অপরাধ জগতের টাইমজোন। এখানে প্রতিদিনই ক্রাইম হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসনের ভুমিকা নিশ্চুপ। এখন মানুষজন পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
নবীনগর উপজেলার নারী নেত্রী ও সমাজ সেবী সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল জানান, পুলিশের নির্যাতনে আসামির মৃত্যু, ক্রমবর্ধমান ডাকাতি, চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় নবীনগরের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। সচেতন মহলের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনূর ইসলাম বলেন, “গত কয়েক দিন আগে হত্যার ঘটনায় একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক চুরির ঘটনাগুলোর উদ্ধার ও তদন্ত চলছে।চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় দ্রুত জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) পিয়াস বাসক জানান, “থানায় জনবল সীমিত হলেও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে। চুরি-ছিনতাই বন্ধে রাতের টহল জোরদার করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments