
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় ‘মাছ চুরির অভিযোগে’ শ্রমিক দলের দুই নেতাকে গাছে বেঁধে মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
এতে বিপদে পড়েছেন পুকুর মালিক মানিক ইসলাম। তিনি যুবদলের কর্মী। ঘটনার পর তার ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছে। তাই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে রোববার দুপুরে রাজশাহী প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
মানিক ইসলামের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার সাইবার গ্রামে। তিনি দুর্গাপুর পৌর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম ও সদস্য সচিব মো. রিপনের বিরুদ্ধে তার পুকুর থেকে মাছ চুরির অভিযোগ তুলেছেন। মানিকের বাড়ির সামনে এই দুই নেতাকে ছাগলের রশি দিয়ে গাছে বেঁধে মারধরের ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার সকালে। এর আগে তাদের পুকুরপাড় থেকে ধরা হয়।
মানিক তার পুকুর থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকার মাছ চুরির অভিযোগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মানিক জানান, তিনি সাইবার গ্রামের আলিমুদ্দিন নামের এক ব্যক্তির ৭৮ শতক পুকুর ইজারা নিয়ে মাছচাষ করছেন। সম্প্রতি শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম ও রিপন তাকে ডেকে বলেন, তারা প্রদীপ বাবু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে পুকুরটি কিনে নিয়েছেন। তাকে পুকুরটি ছেড়ে দিতে হবে।
পরবর্তীতে ১২ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে তারা সমাধানের জন্য বসেন। সেখানে মানিক জানান, আবুল কালাম ও রিপন যদি পুকুর কেনার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তিনি তার মাছ তুলে নিয়ে পুকুর ছেড়ে দেবেন। কালাম কাগজ দেখাতে সময় চান। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ভোররাতে জেলেদের নিয়ে রিপন ও কালাম পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরতে থাকেন। মাছ ধরে বস্তায় বস্তায় ভরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মানিক জানান, সকালে তার বাবা কালাম মোল্লা ও মামা মাইনুল ইসলাম পুকুরে গিয়ে দেখেন, পুকুরে জাল দিয়ে শেষ টান দেওয়ার আগে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে মাছ লাফালাফি করছে। পুকুরের দক্ষিণ দিকে তারা দেখেন, রিপন ও কালাম জেলেদের নিয়ে মাছ ধরছেন। তাদের দেখে অন্যরা পালিয়ে যায়। তবে কালাম ও মাইনুল নামে শ্রমিক দলের দুই নেতাকে ধরে ফেলেন। খবর পেয়ে মানিক সেখানে গিয়ে দুজনকে তাদের বাড়ির সামনে নিয়ে যান।
মানিক বলেন, এ সময় অনেক উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে যান। আমি বাধা দেওয়া সত্ত্বেও গ্রামের কিছু যুবক বাড়ির সামনে ছাগল বেঁধে রাখা দড়ি খুলে দুজনকে গাছের সঙ্গে বাঁধেন। এ সময় দুই-একজন একটু মারধরও করেন। পরে তাদের প্রাণে বাঁচাতে আমি বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাই এবং পানি ও বিস্কুট খেতে দেই। কারণ কালাম সম্পর্কে আমার মামার চাচাশ্বশুর হয়।
মানিক জানান, এ ঘটনার পর দলীয় নেতাকর্মীরা আসেন। তখন তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, আগামী ২১ অক্টোবর তারা সবাই বসবেন। এরই মধ্যে কালামের ছেলে সোয়াত এসে বলতে থাকেন- তার বাবাকে নাকি রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে। তিনি মামলা করার হুমকি দিয়ে চলে যান। পরে সোয়াত থানায় যান। এ সময় ওসি আতিকুল ইসলাম তাকে ফোন করে দুজনকে ছেড়ে দিতে বলেন। পরে দুই নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মানিক অভিযোগ করেন, এ ঘটনার জের ধরে পরদিন সন্ধ্যায় কাঁঠালবাড়িয়া এলাকায় সোয়াত ও তার সহযোগী করিম ও সজিব রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে মোটরসাইকেলে এসে তার ওপর হামলার চেষ্টা করেন। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাতের চেষ্টা করলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এখন ভয়ে তার পরিবারের কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। এখন তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। তিনি নিজের নিরাপত্তা এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম বলেন, পুকুরটা আমি কিনে নিয়েছি। কাগজপত্র আছে। পুকুর ছেড়ে দিতে বললে মানিক ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বৃহস্পতিবার সকালে আমি ও রিপন পুকুর দেখতে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের ধরে মানিক তার বাড়ির সামনে নিয়ে যায় এবং গাছে বেঁধে মারধর করে। আমরা মাছ চুরি করতে যাইনি। পুকুর থেকে কোনো মাছও ধরা হয়নি। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
দুর্গাপুর থানার ওসি আতিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটা আমরা শুনেছি। কিন্তু কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আমরা সেটা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
Comments