বকেয়া বেতন, গ্যাস চুরি: দুই সংকটে অনন্ত জলিলের শিল্প প্রতিষ্ঠান

“আমার বাবা-মা, স্ত্রী সন্তানসহ ১০ জনের সংসার চলে আমার বেতনে। কিন্তু তিন মাস ধরে বেতন পাইনি। বাড়িওয়ালা ভাড়া চাইছে, দোকানদার বাকিতে আর কিছু দেয় না। অসুস্থ হয়েও ওষুধ কেনার টাকা পর্যন্ত নেই।”
কান্নাভেজা কণ্ঠে বলছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেতা ও প্রযোজক অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন এজেআই গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিক ইদ্রিস আলি।
শুধু ইদ্রিস আলি নন, তাঁর মতো আরও অন্তত দুই শতাধিক শ্রমিক সোমবার সকালে কারখানার সামনে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। তবে দাবি মেনে নেওয়া বা বেতন পরিশোধের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
আরেক শ্রমিক আক্তারুজ্জামান বলেন, “আমাদের মধ্যে কেউ তিন মাস, কেউ আবার দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। এখন এমন অবস্থা যে রাস্তায় নেমে ভিক্ষা করতে হয়।”
শ্রমিক সাদেকুর হোসেন জানান, “গ্রাম থেকে চার মাস আগে শহরে এসেছি চাকরি করতে। এক মাসের বেতন পাইছি, তারপর থেকে আর কিছু না। এখন শুনি কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, অথচ বেতনও দেয় না। খুব কষ্টে দিন পার করছি।”
কারখানায় গিয়ে সাংবাদিকরা শ্রমিকদের বক্তব্য জানতে চাইলেও নিরাপত্তাকর্মীরা গণমাধ্যমকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি, জানিয়ে দেন মালিকপক্ষের নির্দেশ রয়েছে বাইরে কাউকে প্রবেশ না করতে।
অন্যদিকে, অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন আরেকটি কারখানার গ্যাস বিল বকেয়া ও মিটার টেম্পারিং করে গ্যাস চুরির অভিযোগে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি।
গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত কারখানাটিতে অভিযান চালিয়ে দুইটি গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার জব্দ করে তিতাসের ভিজিল্যান্স টিম। এ সময় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার দুটি খুলে আনতে গেলে আটকে রাখা হয় তিতাসের গাজীপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভিজিলেন্স টিমের ব্যবস্থাপক আলিম রাসেল সহকর্মকর্তাদের। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
তিতাসের ভিজিল্যান্স টিমের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম রাসেল গণমাধ্যমকে বলেন, “অভিযানে গ্যাস মিটার টেম্পারিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দুটি মিটার জব্দ করা হয়েছে।”
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের সাভার আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (প্রকৌশলী) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, “এজেআই গ্রুপের কারখানায় তিনটি গ্যাস সংযোগ রয়েছে। টেক্সটাইল ইউনিটের দুটি সংযোগের বিপরীতে প্রায় ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বকেয়া বিল রয়েছে। আমরা বকেয়া আদায়ে গেলে দেখি, গ্যাস চুরি হচ্ছে। তাই মিটার দুটি জব্দ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী চুরিকৃত গ্যাসের মূল্য ও বকেয়া পরিশোধের পর সংযোগ পুনরায় চালু করা হবে।”
তিনি আরও জানান, কারখানার অপর সংযোগটি অন্তত জলিল ও তাঁর স্ত্রী চিত্রনায়িকা আফিয়া নুসরাত বর্ষার মালিকানাধীন এবি গ্রুপের নামে, যা বর্তমানে একটি চাইনিজ প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ওই সংযোগের বিল নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি এই ফ্যাক্টরিটি ভাড়া দিয়েছিলাম জুয়েল ইসলাম নামে একজনকে। সে-ই বিল না দিয়ে মিটার টেম্পারিং করেছে। এতে আমার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি নিজে এ ঘটনায় দায়ী নই।”
Comments