সীতাকুণ্ডে ২২ দিনে অভিযান ব্যর্থ, প্রশাসনের নাকের ডগায় জাটকা ইলিশ ধরার মহাউৎসব
নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সীতাকুণ্ডে প্রশাসনের নাকের ডগায় জাটকা ইলিশ ধরার মহাউৎসব চলছে। বাইশ দিন বন্ধ বলে জেলেরা কিছুই জানেন না। প্রতিদিন সকাল-বিকাল ঘাটে মাছ নিয়ে আসছে সাগর থেকে জেলেরা। সন্ধ্যা তখন ৬টা, কুমিরা ঘাটের জেটির পশ্চিম পাশে মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযানে কোস্টগার্ড এবং নৌ-পুলিশের সহায়তায় অবৈধভাবে মাছ শিকারের অভিযোগে দেখা যাচ্ছে। ঘাটের দক্ষিণ পাশে তখন সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৪০/৫০ টি লাল বোট। অন্ধকারের মধ্যে একে একে বোটে উঠছে জেলেরা। তারা রাত এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে মাছ নিয়ে তীরে ফিরবে। এমন দৃশ্য দেখা গেলো চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সন্দ্বীপ-কুমিরা ঘাট এলাকায়। ২২ দিন জাটকা আহরণ, বিপণন, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ হলেও তা একেবারেই উপেক্ষিত। মা ইলিশ রক্ষায় দেশব্যাপী ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চললেও সীতাকুণ্ডে তা উপেক্ষা করে চলছে মাছ ধরার মহোৎসব। শত শত জেলে দিন-রাত অবাধে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকার করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ইলিশ গোপনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। পুরো উপজেলার মধ্যে ইলিশ মাছ কেনার বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা জেলেদেরকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সাগরে পাঠান বোট নিয়ে। অভিযানে কোনো জেলে আটক হলে সিন্ডিকেটের লোকজন আড়ালে থেকে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যেখান থেকে বোট ছাড়া হয় নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই অবস্থিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশকে 'ম্যানেজ' করেই এই বেআইনি কর্মকাণ্ড চলছে। কুমিরা ঘাট এলাকা থেকে মাত্র ২০০/৪০০ মিটার দূরে রয়েছে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। অথচ তাদের সামনেই শত শত বোট নিয়মিত মাছ শিকার করলেও তা তাদের নজরে পড়ে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, সাগরে এখন প্রচুর ইলিশ। জেলেদের কাছ থেকে পাইকাররা কেজি দুইশত টাকা দরে গোপনে কিনে মজুদ করছে। নিষেধাজ্ঞার পর মাছগুলো বেশি দামে বিক্রি করবে। প্রশাসনের নজরদারির পরও কিভাবে মাছ ধরছে এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলেরা বলেন, সিন্ডিকেটের লোকজনের সাথে নৌ পুলিশের যোগসাজশে মাছ শিকার করছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, জনবল সংকট, পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকা এবং বাজেটের অভাবের কারণে পুরো উপজেলার কার্যক্রম মনিটর করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারপরও কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের সহযোগিতায় আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি, জেল জরিমানা করা হচ্ছে। জরিমানা জেনেও তারা সাগরে মাছ শিকার করতে যাচ্ছে। গত দুই দিনে প্রায় ৪ হাজার জাটকা ইলিশ আটক করেছি, এইগুলো উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।
Comments