Image description

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলে কেউ অসুস্থ হলে আজও তাঁকে কাঁধে বেঁধে নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। কখনও নৌকায়, কখনও পায়ে হেঁটে—এভাবেই চলে জীবনের অনিশ্চিত দৌড়।

সম্প্রতি চরাঞ্চলের এক দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে—দু’জন তরুণ একটি খাটিয়ায় অসুস্থ মানুষকে কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন বিস্তীর্ণ বালুচরে।

এই দৃশ্য শুধু এক রোগীর কষ্ট নয় এটি সমগ্র যমুনা উপত্যকার বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

কাজীপুর উপজেলার ছয়টি চর ইউনিয়ন—চর রুহুল্লাহ, চর গিরিশ, চর ঘুড়কা, চর কুশাবাড়ি, চর হালুয়াঘাট ও চর আঙ্গারুয়া। এই এলাকাগুলোয় এখনো নেই পর্যাপ্ত সড়ক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা। বর্ষায় যোগাযোগ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শুষ্ক মৌসুমে নদীর বালুচর পেরোনোই হয়ে ওঠে বড় চ্যালেঞ্জ।

স্থানীয় এক তরুণ বলেন, “রোগীকে হাসপাতালে নিতে হলে প্রথমে খাটিয়া তৈরি করতে হয়। তারপর কাঁধে নিয়ে বালু আর ধুলার ভেতর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটতে হয়। কেউ মারা গেলে সেটিও এই পথেই নিয়ে যেতে হয়।

চরের অনেক গ্রামে এখনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। ছোটখাটো অসুস্থতায় স্থানীয় ‘কবিরাজ’ বা ফার্মেসির ওষুধই ভরসা।
গুরুতর অসুস্থ হলে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতাল কাজীপুর সদরে, দূরত্ব প্রায় ২০-৩০ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথ পার হওয়া অনেক সময় রোগীর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

স্থানীয় শিক্ষক আবদুল করিম বলেন, এখানে অসুস্থ হওয়াটা মানে এক রকম ভয়। হাসপাতালে পৌঁছানোই এখানে ভাগ্যের ব্যাপার।

বছরের পর বছর ধরে চরবাসীর দাবি—এই ছয় ইউনিয়ন নিয়ে নতুন যমুনা উপজেলা গঠন করা হোক।
তাদের মতে, স্বতন্ত্র উপজেলা হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন প্রকল্প সহজে পৌঁছাবে চরবাসীর দোরগোড়ায়। সেতু, সড়ক ও স্বাস্থ্যসেবা বাড়লে জীবনমান উন্নত হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, “যমুনা উপজেলার দাবিটি শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি মানবিক প্রয়োজন। উন্নয়নের মূলস্রোতে চরাঞ্চলকে আনতেই নতুন উপজেলা জরুরি।

চরের মানুষের কাছে উন্নয়ন এখন কোনো বিলাসিতা নয় এটি টিকে থাকার শর্ত। তাদের সন্তানেরা যেন স্কুলে পৌঁছাতে পারে, অসুস্থ মানুষ যেন সহজে চিকিৎসা পায়—এটাই তাদের ছোট্ট আশা।

যমুনা পাড়ের মানুষ জানে, একদিন হয়তো নদীর এ পারে থেকেও অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শোনা যাবে,
সেই দিনের অপেক্ষায় তারা এখনও বেঁচে আছেন।