মাধবপুরে শীতের আগমনী বার্তা; কুয়াশা, শিশির আর ঠাণ্ডা হাওয়ায় বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি
হবিগঞ্জের মাধবপুরে ধীরে ধীরে নেমে আসছে শীতের আগাম বার্তা। অক্টোবরের শেষপ্রান্তে এসে সকাল ও সন্ধ্যার সময় চারদিক ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরে। মাঠের ঘাসে জমছে শিশিরবিন্দু, গাছের পাতায় টুপটাপ ঝরছে শিশিরের জল। বাতাসে বইছে হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া— যেন প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে, দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে শীতকাল।
আবহাওয়ার চিত্র :
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে মাধবপুরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর রাতে নেমে এসেছে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। ভোরবেলা ঘন কুয়াশা এবং হালকা শিশিরের পরিমাণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাঠে-ময়দানে শীতের ছোঁয়া :
মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই চারপাশে কুয়াশায় ঢাকা। পথচারীরা কেউ গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছেন চাদর, কেউবা পাতলা কম্বল। চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে, গরম চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে অবিরাম।
স্থানীয় কৃষক প্রদীপ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, “ভোরে মাঠে গেলে শরীরে ঠাণ্ডা কাঁপুনি ধরে। ধানের পাতায় শিশির জমে থাকে, বুঝা যায় শীত আসছে।”
শিমূলঘর গ্রামের দোকানদার লালজান মিয়া মোল্লা জানান, “সন্ধ্যা নামলেই এখন ক্রেতারা গরম চা খেতে ভিড় করছে। আগের তুলনায় বিক্রিও বেড়ে গেছে।”
কৃষি দপ্তরের বক্তব্য :
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (মাধবপুর কৃষি অফিস) সজীব সরকার বলেন, “এখনো পুরোপুরি শীত বলা যাবে না, তবে হেমন্তের ছোঁয়া স্পষ্ট। শিশিরের কারণে ফসলের পাতায় আর্দ্রতা বাড়ছে, যা পোকামাকড় বা ছত্রাক আক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কৃষকদের আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী সপ্তাহে ভোরবেলা তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। ধানসহ সবজিক্ষেত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।”
স্থানীয়দের অনুভূতি :
বয়স্কদের মতে, এবারের শীত আগের বছরের তুলনায় কিছুটা আগেভাগেই এসেছে।
৭৫ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ সানু মিয়া মোল্লা বলেন, “আমাদের সময় এমন কুয়াশা সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি দেখা যেত। এখন অক্টোবরের শেষেই ঠাণ্ডা পড়ছে। প্রকৃতি যেন আগেভাগেই বদলে যাচ্ছে।”
শীতকালীন প্রস্তুতির পরামর্শ :
ভোর ও সন্ধ্যায় হালকা ঠাণ্ডা এড়াতে চাদর, সোয়েটার বা পাতলা কম্বল ব্যবহার করুন। রাতে জানালা-দরজা কিছুটা বন্ধ রাখলে ঠাণ্ডা বাতাসের প্রবেশ কম হবে।
স্বাস্থ্য ও জনসচেতনতা :
শিশুরা ও বয়স্করা যেন ঠাণ্ডা না লাগে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। গরম পানি ও উষ্ণ পানীয় পান করুন, হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তর শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে প্রচারণা জোরদার করেছে।
কৃষি ও বাজার প্রস্তুতি :
ভোরের শিশিরে ধান, ফুল ও সবজিতে ছত্রাক আক্রমণ বাড়তে পারে — প্রতিরোধমূলক ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি দপ্তর। বাজারে চা, পিঠা ও গরম কাপড়ের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।
হেমন্তের এই পরিবর্তিত আবহে প্রকৃতি নতুন রূপে সেজেছে। শিশিরভেজা সকাল, কুয়াশাচ্ছন্ন সন্ধ্যা আর ঠাণ্ডা হাওয়ায় ভরে উঠেছে মাধবপুরের আকাশ-বাতাস।
সব মিলিয়ে প্রকৃতি যেন জানিয়ে দিচ্ছে — “শীতের দিনগুলো একেবারে দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে।”




Comments