Image description

রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি বাজার,যা কাপ্তাই লেকের কোল ছুঁয়ে পাহাড়-অরণ্যের মাঝে লুকিয়ে থাকা এক উৎসবের স্থান। এখানে সপ্তাহের বাকি দিনগুলো চলে শান্ত, নিরিবিলি ছন্দে। কিন্তু যখনই আসে মঙ্গলবার, বিলাইছড়ি হাট বাজার তখন রুপ নেয় এক বর্ণিল মহোৎসবে! এটি শুধু বেচাকেনার দিন নয়, এটি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মিলনমেলা, সংস্কৃতি আর জীবনযাপনের এক জমজমাট প্রর্দশনী।

বিলাইছড়ি বাজারটি প্রায় ৬ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত হলেও, সপ্তাহের এই বারটি আসলে বাজারের প্রতিটি কোণা মুখরিত হয়ে ওঠে মানুষের পদচারণায়। দূর-দূরান্তের দুর্গম গ্রাম থেকে আসা স্থানীদের জন্য এ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের।

এ দিনের মূল আকর্ষণ হলো পাহাড়িদের জুমে উৎপাদিত টাটকা পণ্যের বিপুল সমাহার।সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে কষ্ট করে ফলানো ফসল নিয়ে পাহাড়িরা বাজারে ছুটে আসেন। অন্য কোন দিন যা সহজে মেলে না,সেই বাঁশ কোড়ল(বাঁশের কচি অংশ), কলার থোড়, টকপাতা (যার বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus Sabdariffa), সিদোল বা নাপ্পি (পাহাড়িদের বিশেষ  জনপ্রিয় খাবার), জুম কচু, জুম বেগুন, জুম মরিচ, জুম পান এবং হরেক রকমের পাহাড়ি সবজি এই দিন পাওয়া যায় একেবারে সস্তায়। তাই এই দিন ক্রেতাদের ভিড়ও হয় বেশি।

এছাড়াও পাহাড়ি খাবারের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো শুঁটকি। যেমন: লটিয়া, ছুড়ি, ইচা(চিংড়ি) থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী হাঙর শুঁটকি পর্যন্ত নানা ধরনের শুঁটকির মেলা বসে এ দিনে।

বিলাইছড়ি বাজারটি বহু জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মিলনক্ষেত্র। এ উপজেলায় বাঙ্গালি জনগোষ্ঠী ছাড়াও মোট ১০টিরও বেশি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস রয়েছে। বসবাসকারী প্রধান প্রধান জাতিগোষ্ঠী হলো: তঞ্চঙ্গ্যা(জনসংখ্যার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ), চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া, বম, মুরং(ম্রো), চাক, রিয়াংখুমি ইত্যাদি। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর ভাষার বৈচিত্র্য বাজারকে এক সাংস্কৃতিক রং দেয়, যা বলা বাহুল্য।

বাজারটির অবস্থান কাপ্তাই হ্রদের তীরে হওয়ায় পাহাড়ের ভেতরের জনপদ থেকে শুরু করে পাশ্ববর্তী এলাকা থেকেও মানুষ ট্রলার বা ডিঙি নৌকায় করে ভিড় জমায় বাজারের ঘাট। ঘাটে বাঁধা সারি সারি নৌকার দৃশ্যই বলে দেয় এই দিনের ব্যস্ততা কতখানি। সাপ্তাহিক এ হাট বাজারের বর্ণিল রঙিন দৃশ্য পর্যটকদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।