Image description

আামি মোঃ নাছির সাং পূর্ব সুন্দরী পাড়া, হালিশহর, বড়পুল) এই-মর্মে প্রত্যয়ন করতেছি যে, আমার ছেলে মোঃ নাইম আহমদ সিরাহ, শ্রেনি-৮ম, রোল-১০৫,জেআইসি ব্লকে অবস্থানরত। সে কিছুটা নেশাগ্রস্থ ও মানসিকভাবে অস্থির। তাই সে যে কোন সময় যে কোন অঘটন ঘটাতে পারে। আমি অভিভাবক হিসেবে তাকে শিকলবন্দী করে রাখার জন্য ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি। এমতবস্থায় যদি তাঁর দ্বারা কোন অঘটন ঘটে থাকে, তাহলে আমি কখনো কর্তৃপক্ষকে দায়ী করবনা। সম্পূর্ণ দায় দারিত্ব আমার নিজের উপর বর্তাবে। প্রশাসনের নিকট আমি জবাবদিহি থাকতে বাধ্য থাকবো, স্যারদেকে কখনো দায়ী করব না। নিবেদক মোঃ নাছির আহাম্মদ মোবাইল ০১৮২৫-৫৮৬০৫৯।

এই ভাবে একটি অভিভাবক দরখাস্ত দিয়ে কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিকল পড়ে দুই শিক্ষার্থীদের রাখেন। 

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলা কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়। একসময় সারাদেশের ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। যেটা জেল স্কুল নামে সীতাকুন্ডে পরিচিত। মা-বাবারঅবাধ্য সস্তান যারা পড়াশোনা করতো না, পড়ালেখায় অমনোযোগী ছেলেদের অভিভাবকরা কুমিরা জেল স্কুলে ভর্তি করে দিতেন। দুই পায়ে শিকল লাগানো অবস্থায় তারা স্কুলের আবাসিকে থেকে পড়াশোনা করতো। তখন উক্ত স্কুলে প্রায় ১৫০ জনের শিক্ষার্থী দুই পায়ে শিকল পড়ে ক্লাস করতো। সেই যুগ গত হয়ে গেছে আরো বহু আগে। এখন তো ক্লাসে বেত নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও নিষেধ আছে। এরমধ্যেই জেল স্কুল নামে খ্যাত কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে দুইজন শিক্ষার্থী দুই পায়ে শিকল পড়ে পড়াশোনা করছে। 

শনিবার সরেজমিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেলো রাশেদুল করিম (১৫) ৮ম শ্রেণীতে পড়ছে এবং মোহাম্মদ বিন আমিন (১২) পড়ছে ৬ষ্ট শ্রেণীতে। দুইজনের বাড়ি ফেণীতে। রাশেদুল করিম আট মাস ধরে স্কুলে লেখা পড়া করেন। দুই মাস আগে স্কুল থেকে পালিয়ে যায়।পরে অভিভাবক দরখাস্ত দিয়ে শিকল পড়ে পড়াশোনা করার জন্য আবেদন করেন। 

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুইজনই মোবাইলে আসক্ত। প্রায় সময় স্কুল থেকে পালিয়ে যায়। তাই তাদের মা-বাবা ফেনী থেকে কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। 

জানা যায়, ১৯৩০ এর দশকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা স্বগীয় বাবু জমিদার নিবারন চন্দ্র দাশ স্কুলের জন্য একখন্ড জমি দান করেন। পরে ৪একর ৮০শতক হয় স্কুল জায়গা। এরপরে ১৯৩৮ সালে জহুরুল ইসলাম চৌধুরীর আর্থিক সহযোগিতায় একটি ভবন নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়। স্কুলটি আবাসিক হওয়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। আনুমানিক ১৯৭০ সাল থেকে শুরু হয় পায়ে শিকল পড়া। তখনকার আমলে মা-বাবার অবাধ্য এবং স্কুল পলাতক সস্তানদের এ স্কুলে ভর্তি করতো তাদেরকে শিকল পরিয়ে রাখা হতো। সে হিসেবে স্কুলটি সারাদেশে জেল স্কুল নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। 

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলী নেওয়াজ বলেন, তিনি এই স্কুলে যোগদান করেন ১৯৯৩ সালে। একসময় এ স্কুলকে জেল স্কুল বলা হতো। ওই সময় অমনোযোগী, মা-বাবার অবাধ্য এবং স্কুল পলাতক ছেলেদেরকে পায়ে শিকল পরিয়ে পাঠদান দেওয়া হতো। তবে বর্তমানে এ নিয়ম না থাকার পরও পায়ে শিকল পড়ে দুইজন শিক্ষার্থী আমার স্কুলে পড়ালেখা করছে। তাদের পরিবার থেকেই শিকল, তারা কিনে ফেনী থেকে নিয়ে এসেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে এমনটা করা হয়নি। দুই ছেলের অবিভাবক লিখিত দিয়ে তাদের অবাধ্য সস্তানকে এখানে ভর্তি করেছেন। যাতে তারা পালিয়ে যেতে না পারে। বর্তমানে যুগে যেখানে ক্লাসে বেত নিয়ে যাওয়া নিষেধ সেখানে পায়ে শিকল পরিয়ে পাঠদান দেওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়।