মুন্সীগঞ্জে ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও গ্রিলের ফাঁক দিয়ে মহাসড়ক পারাপার
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার অংশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পথ চারীদের পারাপারে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক ফুটওভার ব্রিজ। কিন্তু এসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ডিভাইডারের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছেন যাত্রী ও পথচারীরা। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি মহাসড়কের উপজেলার জামালদী, ভাটেরচর, ভবেরচর এবং বাউশিয়া পাখির মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের ব্যস্ততম বাস স্ট্যান্ডে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও অনেকেই তা ব্যবহার না করে নিচ দিয়ে সড়ক পারাপার হচ্ছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ এড়িয়ে গাড়ির সামনে দিয়েই রাস্তা পার হতে দেখা যায়।
মহাসড়কের জামালদী বাস স্ট্যান্ড থেকে বাউশিয়া পাখির মোড় পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কে ৫টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। কিন্তু এসব ব্রিজের ব্যবহার কমে যাচ্ছে দিন দিন। বিশেষ করে ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড এলাকার ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। সেখানে পথচারীরা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছেন।
ঝুঁকি নিয়ে পার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এক পথচারী বলেন, এখান দিয়ে দ্রুত আসা যায়। পাশেই তো ফুটওভার ব্রিজ আছে, সেখান দিয়ে না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্রিজে উঠতে সময় লাগে, ওঠাও ঝামেলার। কিছুদূর ঘুরে আসতে হয়। যদি দুর্ঘটনা ঘটে যেত? জবাবে বলেন, কী আর করা, এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
ফয়সাল আহমেদ নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা সড়কের ওপর দিয়েই পার হয়ে একপাশ থেকে অন্যপাশে আসেন। তিনি বলেন, আসলে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে এটা। আপনি দেখেন দলে দলে মানুষ সড়কের ওপর দিয়েই পার হচ্ছেন। সেসব মানুষের সঙ্গেই চলে এসেছি। ফুটওভার ব্রিজ আমাদের ভালোর জন্যই করা হয়েছে। আমরা সেটি ব্যবহার করছি না। সময় বাঁচাতে গিয়ে এমনটা হচ্ছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় স্থানীয় সেলুন ব্যবসায়ী বিপ্লব বলেন, চোখের সামনে অনেক দুর্ঘটনা দেখেছি। মানুষ রাস্তা পার হচ্ছেন এমন সময় দ্রুত গতির একটি কাভার্ডভ্যান বা বাস এসে তুলে দিল তার ওপর। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মারা গেছেন কিংবা পঙ্গু হয়ে গেছেন। মানুষ তবুও কেন জানি এত ঝুঁকি নিয়ে পার হয়।
মানবাধিকার কর্মী এসএম নাসির উদ্দীন বলেন, সম্ভবত আমরাই একমাত্র জাতি যারা মৃত্যুর তোয়াক্কা না করেই মহাসড়কে নিজেকে বিলিয়ে দেই। সড়ক পারাপারের জন্য সরকার ফুটওভার ব্রিজ করে দিয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার না হয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
সচেতন মহল বলছেন, মানুষকে একটি নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করতে হবে সব ক্ষেত্রে। এর জন্য প্রয়োজন সবার সদিচ্ছা। মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে মহাসড়কে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বরত এক হাইওয়ে পুলিশ জানান, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেক বেশি থাকে। আমরা যখন গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত থাকি তখন ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ পার হয়। প্রায় সময়ই দেখা যায়, চলন্ত গাড়ির মধ্য দিয়েই মানুষ চলতে শুরু করে। তবুও মানুষ ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করে না।
ভবেরচর হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শওকত হোসেন বলেন, মহাসড়কে রাস্তা পারাপারে মানুষের সচেতন হতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। পুলিশের হাতে যে ক্ষমতা রয়েছে আমরা সেটাকে ব্যবহার করে মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পারাপারে উদ্বুদ্ধ করছি। কিন্তু পথ যারা ব্যবহার করেন প্রত্যেককে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, সড়কে চলাচলকারী সবার উচিত নিজ দায়িত্বে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা। আমরা মহাসড়কে মাঝখানে লোহার রড দিয়ে ঘেরাও করে দেই, মানুষ সেসব রড ভেঙে রাস্তার মাঝ দিয়ে চলাচল করে। আমরা আমাদের পক্ষে যেটা করণীয় সেটা করে যাচ্ছি, মানুষকে সচেতন হতে হবে।




Comments