Image description

৭ই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বোয়ালমারী পৌরবাজারে ওয়াপদার মোড় এলাকা। এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৪০-৫০ জন কমবেশি আহত হয়েছে। আহতরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

সংঘর্ষের সময় ওয়াপদার মোড়ের পাশে হারুণ শপিং কমপ্লেক্সে বিএনপির একাংশের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। আগুন দেওয়া হয় ওই শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থাকা অন্তত ১২টি মোটরসাইকেলে। এছাড়া আশেপাশের দোকানগুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়া ওরফে ভিপি ঝুনুর নেতৃত্বে দুই ভাগে বিভক্ত ফরিদপুর-১ আসনের (বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাপডাঙ্গা উপজেলা) বিএনপি। তারা দুইজনই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে দলটি এ আসনে এখনো কাউকেই দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত করেনি। এ আসনে স্থগিত রাখা হয়েছে বিএনপির মনোনয়ন। 

ঘটনার প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শামসুদ্দীন মিয়া ভিপি ঝুনুর সমর্থকরা মাঝকান্দি-বোয়ালমারী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ওয়াপদার মোড় এলাকায় এবং সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পৌর বাস টার্মিনাল মোড়ে সমবেত হতে শুরু করেন। উভয় সমবেতদের হাতে বাঁশের লাঠির মাথায় ধানের শীষ বাধা ছিল। বিকেল ৪টার দিকে ঝুনুর কিছু সমর্থকরা ওয়াবদা মোড় থেকে পৌর বাস টার্মিনালের দিকে এগোতে থাকে। পরে তারা পুনরায় ওয়াবদা মোড়ে অবস্থান নেয়। 

এদিন বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে ওয়াপদার মোড় এলাকার দিকে এগুতে থাকলে দুইপক্ষ পরস্পরের প্রতি ইট নিক্ষেপ করতে শুরু করে। তবে নাসিরুলের সমর্থকরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় শামসুদ্দীনের সমর্থকরা পিছু হটে ওয়াপদার মোড়ে হারুণ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়।

এ ঘটনার সময় বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান দুইপক্ষকে থামানোর জন্য ঘটনাস্থলে পৌছান। তবে উভয়পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকলে নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা ওসি-ইউএনও’র গাড়ীর দিকে এগুতে থাকলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এরপর নাসিরুলের সমর্থকরা হারুণ শপিং কমপ্লেক্সে সামনে থাকা অন্তত ১২টি মোটরসাইলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ওই ভবনে ঢুকে নিচ তলায় অবস্থিত বিএনপির একাংশের দলীয় কার্যালয় (শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু) ও বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে। এছাড়া আশেপাশে বিভিন্ন দোকানে হামলা করে ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় হামলাকারীদের হাতে ইট, লাঠির সাথে রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র প্রদশণ করতে দেখা যায়। এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে বেশি কিছু পুলিশকে ওয়াবদা মোড়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ঢুকে নিজেরা নিরাপত্তা নেয়। পরে সোয়া ৫টার দিকে বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিসের একটি দল একটি গাড়ি আগুন নেভাতে আসলে সে সময় বিক্ষুব্ধরা লাঠি ও ইট দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতেও হামলা করে। 

খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে সোনাবাহিনীর সদস্যরা এসে অবস্থান নেয়। সেনাবাহিনী আসার পর দমকল বাহিনী পুনরায় ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভায়। সেনাবাহিনী থাকার পরও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর অবস্থা বিরাজ করতে দেখা যায়।

এ হামলা ও সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৪০-৫০ জন কমবেশি আহত হয়েছে। আহতরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনু বলেন, প্রশাসনকে জানিয়ে আমরা ওয়াপদার মোড়ে অনুষ্ঠান করছিলাম। এসময় নাসিরুলের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকদের সাথে নিয়ে অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তারা ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে ও বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় আমার ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছে। কার্যালয়ে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ও তারেক রহমানের ব্যানার ভাংচুর করা হয়েছে। 

খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, আমি ছিলাম মধুখালী। আমাদের লোকজনদের উপর হামলা করা হয়েছে। একজনকে কুপিয়ে জখম করে। ওরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের উপরে উঠে আমার সমর্থদের উপর ইট ছুড়ে মারলে চার-পাঁচজন কয়েকজন আহত হয়েছে ঝুনু মোহাম্মদপুর ও সালথা থেকে লোক ভাড়া করে এনে এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, বিএনপির  দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ভাংচুর ও অগ্নিংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। তবে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী আসার পর পরিস্থিতি বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।