Image description

খুলনা আদালত চত্বরের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে শীর্ষ সন্ত্রাসী হাসিব হাওলাদার ও ফজলে রাব্বি রাজন হত্যার ঘটনায় নিহতদের পরিবার মামলা না করায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনা সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ১৫-১৬ জনকে আসামি করে এই মামলাটি করা হয়। খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাই জানান, নিহতদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন কোনো অভিযোগ না করায় এবং ঘটনাটি ধর্তব্য অপরাধ হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারা এবং ১৯ (এফ) আর্মস অ্যাক্ট ১৮৭৮ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এসআই মো. মিয়ারব হোসেনকে।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে গুলির কার্তুজ ও ব্যবহৃত কার্তুজের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিরা পূর্বশত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে এই জোড়া হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত রোববার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান গেটের সামনের সড়কে হাসিব হাওলাদার ও ফজলে রাব্বি রাজনকে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানায়, নিহতরা খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশ বাহিনীর সদস্য। তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি চৌধুরী বাবু ওরফে গ্রেনেড বাবুর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

নিহত দুই পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাজনিত কারণে মামলা করতে সাহস পাননি। নিহত রাজনের বাবা মো. এজাজ শেখ বলেন, ‘ছেলের হত্যার বিচার আল্লাহর আদালতে দিয়েছি। আদালতে হাজিরা দিতে এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলে কার কাছে বিচার চাইব। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চোখের সামনে যদি নিরাপত্তার এমন হাল হয়, তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মামলা করে কী হবে, আমার ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। উল্টো আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় পড়ব। বন্ধুর উপকার করতে গিয়ে আমার ছেলে মিথ্যা মামলায় ফেঁসেছিল। জেলে থাকা অবস্থায় তাকে হত্যা ও অস্ত্রসহ ছয়টি মামলা দেওয়া হয়। সেই মামলায় হাজিরা দিতে এসেই আজ তাকে প্রাণ দিতে হলো।’

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৫৪ ধারায় আটক রিপন শেখকে নির্দোষ দাবি করেছে তার পরিবার ও নিহত হাসিবের ভাই। বুধবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিপনের স্ত্রী আঁখি এবং নিহত হাসিবের ছোট ভাই সুমন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।

সুমন হাওলাদার বলেন, ‘হাসিবের দুই শিশু কন্যাসহ পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা মামলা করছি না। তাছাড়া পুলিশ সন্দেহের বশে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশী রিপনকে গ্রেপ্তার করেছে। সে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে রিপনের স্ত্রী আঁখি বলেন, ‘ঘটনার দিন রিপন ফকিরহাটের ফলতিতা পাইকারি মাছের বাজারে ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টায় যখন হত্যাকাণ্ড ঘটে, তখন তার ওই বাজারে অবস্থানের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। এছাড়া পুলিশের দাবি অনুযায়ী রিপন ‘ইহুদি’ বাহিনীর সদস্য নয়। ২০০৩ সালে যখন ওই বাহিনী বিলুপ্ত হয়, তখন রিপনের বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জিডিও নেই।’