পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার গ্রাম-গঞ্জ থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি ধান ‘কালোজিরা’। আধুনিক ও উচ্চফলনশীল ধানের দাপটে এই ধান এখন বিলুপ্তির পথে। তবে আশার কথা হলো, স্থানীয় কিছু উৎসাহী কৃষক বিচ্ছিন্নভাবে হলেও এখনো এই ধানের চাষ টিকিয়ে রেখেছেন। সাধারণ ধানের চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় আমন ধানের সঙ্গে মিশ্রভাবে তারা এই ধান চাষ করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গ্রামাঞ্চলের মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের সমারোহ। এরই মাঝে বাতাসে দোল খাচ্ছে কালোজিরা ধানের কৃষ্ণবর্ণের শীষ। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, সোনালি রঙের ক্যানভাসে কালো রঙের ছায়া। এই ধানের সুগন্ধি চাল দিয়ে পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ নানা মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। আগে উৎসব-পার্বণে এই চালের কদর থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে এখন তা অনেকটাই স্মৃতির পাতায় চলে যাচ্ছে।
বীজ সংকটের কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনেক কৃষক এই ধান চাষ করতে পারছেন না। উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের চরকান্দা গ্রামের কৃষক বাদল প্যাদা বলেন, ‘পাশের উপজেলার এক কৃষকের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে এবার আমন ধানের সঙ্গে ১০ কাঠা জমিতে কালোজিরা ধান চাষ করেছি। সাধারণ ধানের চেয়ে এর ফলন কিছুটা কম হলেও দাম অনেক বেশি। প্রতি কেজি চাল ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। আশা করছি বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাব।’
দাসপাড়া গ্রামের প্রবীণ কৃষক হাবিব মৃধা জানান, একসময় পুরো বরিশাল অঞ্চলজুড়ে এই ধানের আবাদ হতো। কিন্তু আধুনিক উচ্চফলনশীল ধানের দাপট, উৎপাদন কম হওয়া এবং বীজ সংরক্ষণ কষ্টসাধ্য হওয়ায় কৃষকরা ধীরে ধীরে এর চাষ কমিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, ‘কালোজিরা ধান চাষের জন্য সরকারিভাবে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় না। তবে কিছু কৃষক শৌখিনভাবে ও বাড়তি লাভের আশায় নিজ উদ্যোগে আমন ধানের সঙ্গে এই ধান চাষ করছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’




Comments