জুলাই পরবর্তী হত্যা মামলার আসামিদের সঙ্গে ইউএনও’র ফটোসেশন: জনমনে তীব্র ক্ষোভ
সিলেটের বিয়ানীবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার একাধিক আসামির সঙ্গে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মোস্তফা মুন্নার ফটোসেশন নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে তোলা এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
জানা গেছে, বিয়ানীবাজারের ইউএনও গোলাম মোস্তফা মুন্নাকে সম্প্রতি অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। রোববার ছিল উপজেলায় তার শেষ কর্মদিবস। এদিন দুপুরে তার দপ্তরে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে আসেন উপজেলার আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আহবাবুর রহমান খান শিশু, শেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জহুর উদ্দিন এবং কুড়ার বাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তুতিউর রহমান তুতা। তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্তদের মধ্যে চেয়ারম্যান আহবাবুর রহমান খান শিশুর বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরকসহ ৩টি মামলা, জহুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা এবং তুতিউর রহমান তুতার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। মামলার পর থেকে তারা ‘পলাতক’ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা কিংবা কোনো রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি। অথচ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে তারা প্রকাশ্য দিবালোকে ইউএনও’র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও ফটোসেশনে অংশ নেন।
চেয়ারম্যান আহবাবুর রহমান খান শিশু নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ইউএনও’র সঙ্গে তোলা ছবি শেয়ার করে লেখেন, ‘বিয়ানীবাজার উপজেলার সুযোগ্য ইউএনও গোলাম মুস্তফা মুন্না মহোদয়কে বিদায় জানাতে। অনেক ভালো মনের একজন অফিসার ছিলেন। আপনার প্রতি ভালোবাসা ও দোয়া রইল।’
হত্যা মামলার আসামিদের সঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার এমন সখ্যতায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও স্থানীয়রা।
শহীদ সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাবের ভাই আবু জাফর বলেন, ‘প্রশাসনে থাকা এমন দোসরদের কারণে জুলাই শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। পলাতক আসামিরা কীভাবে প্রশাসনের নাকের ডগাত দিয়ে ইউএনও’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফটোসেশন করে, তা বোধগম্য নয়।’
জুলাই আন্দোলনে নিহত শহীদ ময়নুল হোসেনের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, ‘আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে আর পুলিশ বলছে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এটা কেমন আইন।’
হেফাজতে ইসলামের একাংশের সভাপতি মুফতি আব্দুল কারীম হাক্কানী বলেন, ‘যে আসামিরা গ্রেপ্তারের ভয়ে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকে, তারা আবার ব্যক্তিগত কাজে উপজেলা প্রশাসনে ঘুরঘুর করে। এর মাধ্যমে তারা বর্তমান সরকারকে অসহযোগিতা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে।’
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ছবেদ আলী বলেন, ‘আসামিরা যে উপজেলা প্রশাসনে এসেছিল, সে বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিল না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদায়ী ইউএনও গোলাম মোস্তফা মুন্না বলেন, ‘তারা আসামি হিসেবে আসেননি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলেন।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট পরবর্তী ঘটনায় বিয়ানীবাজারে তিনটি হত্যাসহ মোট ৪টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় মাথিউরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমান উদ্দিন কারাগারে থাকায় তাকে মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে মামলার আসামি হয়েও অন্য আওয়ামীপন্থী ইউপি চেয়ারম্যানরা এখনো স্বপদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।




Comments