Image description

আজ ৮ ডিসেম্বর, পটুয়াখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পটুয়াখালী জেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর বহু ত্যাগের বিনিময়ে এই দিনে পটুয়াখালীর আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত এক মাস পটুয়াখালী জেলা ছিল মুক্তাঞ্চল। সেসময় সংগ্রাম পরিষদ বর্তমান সরকারি মহিলা কলেজে জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করে। সেখানে তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম এ আউয়াল পুলিশ লাইনস থেকে রাইফেল ও গুলি তুলে দিয়ে এই কাজে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। এই অপরাধে পরবর্তীতে পাকহানাদাররা তাকে গুলি করলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় পটুয়াখালীর আকাশে হানা দেয় পাক-হানাদারদের জঙ্গিবিমান। শুরু হয় বেপরোয়া শেলিং ও বোমাবর্ষণ। কয়েক ঘণ্টা বিমান হামলার পর সামরিক হেলিকপ্টারে কালিকাপুর মাদবরবাড়ি এলাকায় অবতরণ করে পাকিস্তানি ছত্রীসেনা। তারা এসেই নিরস্ত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। অগ্নিসংযোগ করে ভস্মীভূত করা হয় শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরান বাজার।

মারনান্ত্রের শব্দ, মানুষের আর্তনাদ, লুটতরাজ আর অগ্নিসংযোগে এক নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই দিনের গণহত্যায় তিন শতাধিক মানুষ শহীদ হন বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে ও জেলখানার অভ্যন্তরে হত্যা করা হয় দেড় হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষকে। মাদবরবাড়ি, আনসার ভবন সংলগ্ন এলাকা এবং পুরাতন জেলখানার অভ্যন্তরের বধ্যভূমি আজও সেই নির্মমতার সাক্ষী হয়ে আছে।

পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে পানপট্টি গ্রাম। ৯ নম্বর সেক্টর হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি মুক্তিযোদ্ধা দলকে কে এম নুরুল হুদা (সাবেক সিইসি) ও প্রয়াত হাবিবুর রহমান শওকতের নেতৃত্বে পটুয়াখালীতে পাঠানো হয়। তারা পানপট্টি সাইক্লোন শেল্টারে ক্যাম্প স্থাপন করেন।

১৮ নভেম্বর ভোর ৬টায় পাক বাহিনীর মেজর ইয়ামিনের নেতৃত্বে একটি দল মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণে পাকবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বিকেল ৪টার দিকে অবস্থা বেগতিক দেখে মেজর ইয়ামিন বাহিনী তাদের সহযোদ্ধাদের মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায়। স্থানীয় জনতা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

পানপট্টির এই যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমেই পটুয়াখালী মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়। পানপট্টি হয় জেলার প্রথম মুক্তাঞ্চল, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে ৮ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয় পটুয়াখালী।