Image description

আজ ৯ ডিসেম্বর, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৫তম জন্ম ও ৯৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৮০ সালের এই দিনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মহীয়সী এই নারী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে নারীর শিক্ষা, অধিকার ও মুক্তির আন্দোলনে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে পায়রাবন্দ থেকেই তিনি সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।

দিবসটি উপলক্ষে পায়রাবন্দে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও রোকেয়ার জন্মভূমি আজও অবহেলা আর বঞ্চনায় জর্জরিত। তার নিজের গ্রামেই নারীর শিক্ষা ও স্বাধীনতার স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পায়রাবন্দে এখনো বাল্যবিবাহের হার উদ্বেগজনক। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই ঝরে পড়ে প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং উচ্চমাধ্যমিকে পৌঁছানোর আগেই এই হার দাঁড়ায় প্রায় ৩০ শতাংশে।

তবে আশার কথা হলো, দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় থাকা বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সঙ্গে একীভূত হচ্ছে। বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় কেন্দ্রটি পুনরায় গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কেন্দ্রটিতে ফের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে দিবসটি এলেই নতুন করে জোরালো হয় বেগম রোকেয়ার দেহাবশেষ ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি। ১৯৩২ সালে মৃত্যুর পর তাকে কলকাতার সোদপুর পানিহাটিতে দাফন করা হয়। ২০০৯ সালে রোকেয়ার ভাতিজি রনজিনা সাবের ফুপুর দেহাবশেষ পায়রাবন্দে আনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তৎকালীন জেলা প্রশাসকও এতে সমর্থন দিয়েছিলেন। এরপর ২০১০ সালে এ বিষয়ে আবেদন পাঠানো হলেও গত এক যুগেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বেগম রোকেয়ার ভাতিজি রনজিনা সাবের বলেন, ‘রোকেয়ার স্মৃতিবিজড়িত সবকিছু পায়রাবন্দে, অথচ তিনি পড়ে আছেন কলকাতার মাটিতে। বছর বছর শুধু আলোচনা হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।’

স্থানীয়দের প্রত্যাশা, দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে স্মৃতিকেন্দ্রের কার্যক্রম যেমন নতুনভাবে শুরু হচ্ছে, তেমনি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দ্রুতই মহীয়সী এই নারীর দেহাবশেষ তার জন্মমাটিতে ফিরিয়ে আনার ঐতিহাসিক দাবিও বাস্তবায়িত হবে।