Image description

পটুয়াখালীর বাউফলে ধীরে ধীরে কৃষির দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। আগে যেখানে কৃষিকে শুধুই প্রথাগত পেশা মনে করা হতো, এখন সেখানে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারা আধুনিক কৃষিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছেন। তাদের এমন উদ্যোগই কৃষিকে নতুন সম্ভাবনার পথে নিয়ে যাচ্ছে। এমনই এক সফল তরুণ কৃষকের নাম আবু জাফর (৩৫)। 

জৌতা গ্রামের এই যুবকের হাতে গড়া বন সুন্দরি জাতের কুলের বাগান এখন এলাকার মানুষের কৌতূহল ও প্রশংসার কেন্দ্রবিন্দু।

মাদরাসা লাইন থেকে এমএ পাস করার পর চাকরি কিংবা ব্যবসায় সীমাবদ্ধ না থেকে জাফর বেছে নেন কৃষিকে। শুরুর দিকে ছোট ব্যবসা করলেও তার মনে ছিল কিছু করার অদম্য ইচ্ছা। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষি সফলতার ভিডিও দেখে উৎসাহ পান। 

জাফর বলেন, “ইউটিউবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক কৃষি দেখে মনে হলো—আমাদের গ্রামেও তো এটা করা যায়। তখনই কুল চাষ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই।” সেই সিদ্ধান্তই তাকে আজ বাউফলের সফল তরুণ কৃষকদের কাতারে দাঁড় করিয়েছে।

বর্তমানে তিনি কুল চাষের পাশাপাশি ধান, পেয়ারা এবং মৌসুমি ফলগাছ লাগিয়েছেন। গত বছর কুল বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এবার তার আশা তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় করবেন। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কুল ১২০ টাকা এবং খুচরা দরে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। “পরিশ্রম করলে কৃষিতে লাভ হয়, সেটা আমি এখন চোখে দেখে বুঝছি,”—বলেন তিনি।

ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে জাফরের সংসার। কৃষি আয়ের ফলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি বেড়েছে। তবে শুরুতে পরিবার তাকে কৃষির পথে আসতে উৎসাহ দেয়নি। তিনি বলেন, “মা প্রথম দিকে বলত—এতো লেখাপড়া করে মাইনদারি করবি? কিন্তু পরে যখন ফলন দেখে বুঝল কৃষিতে আয় আছে, তখন উল্টে আমাকেই উৎসাহ দিতে শুরু করল।”

জাফর বর্তমানে ৫০ শতাংশ জমিতে বন সুন্দরি জাতের কুল চাষ করছেন। উন্নত চারা, সঠিক পরিচর্যা এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির কারণে তার বাগানে ফলনও হচ্ছে চমৎকার। তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এসএসিএপি (SSACP–RAINS) প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাগান ব্যবস্থাপনা, সার প্রয়োগ, রোগবালাই দমন এবং বাজার–সংযোগ বিষয়ে উন্নত জ্ঞান অর্জন করেছেন।

জৌতা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় মানুষজন জাফরের বাগান দেখতে ভিড় করেন। তার সাফল্য দেখে তরুণদের মাঝে কৃষির প্রতি নতুন আগ্রহ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় কৃষক রিপন হাওলাদার বলেন, “জাফর ভাইয়ের বাগান দেখে আমরা অনেকে বুঝেছি—কৃষি কখনো পিছিয়ে থাকা পেশা না। মানুষ চাইলে অনেক কিছু করতে পারে।”

আরেক কৃষক শাহে আলম বলেন, “আগে আমাদের গ্রামে কুল চাষ নিয়ে কেউ ভাবত না। এখন জাফরের সফলতায় অনেকে চাষ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।” স্থানীয় দোকানদার রাসেল জানান, “জাফর ভাইয়ের কুল বাইরে থেকেও লোক এসে কিনে নিয়ে যায়। এতে আমাদের বাজার আরও জমে ওঠে।”

বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, “জৌতা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আবু জাফর আধুনিক কৃষির বাস্তব উদাহরণ। আমরা তাকে নিয়মিত কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি। বন সুন্দরি জাতের কুল অত্যন্ত লাভজনক—যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা যায়।” 

তিনি আরও বলেন, “বাউফলে কুল চাষের সম্ভাবনা বাড়ছে। তরুণরা এগিয়ে এলে কৃষির চিত্র আরও বদলে যাবে।”