বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর যমুনা ও কাজিপুরে বিভিন্ন চরাঞ্চলে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ সবুজ চারণভূমি। আর এসব চারণভূমিতে গজিয়ে ওঠা কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খামারিরা তাদের গবাদিপশু নিয়ে এসে বাথান বসাতে শুরু করেছেন। এতে দানাদার খাবারের ব্যয় কমে যাওয়ায় খামারিদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে এবং দুধ উৎপাদনও বেড়েছে।
স্থানীয় ও ভ্রাম্যমাণ বাথানিদের পাশাপাশি মানিকগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খামারিরা গো-খাদ্যের জন্য কাজিপুর তেকানী, ঘাটাবাড়ী, উতুলি, মালিপাড়া, কুচেমোড়া, নওহাটা, গোসাইবাড়ি, তেগুরীসহ বিভিন্ন চরে অবস্থান করছে। এসব বাথানে এখন প্রায় চার শতাধিক মহিষসহ সহস্রাধিক গবাদিপশু রয়েছে।
বাথান পরিচালনাকারী রাকিব জানান, কাজিপুরের বিভিন্ন চরে ১০-১২টি বাথান রয়েছে। প্রতিটি বাথানে ২৫-৩০টি গরু এবং দেড়শ থেকে ২০০টি পর্যন্ত মহিষ থাকে। চর ইজারা নিতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা গুনতে হয়। এসব বাথান থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৭০-১৮০ লিটার দুধ সংগ্রহ করা হয়, যা ৮০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হয়।
রাখাল মজিদ জানান, “আমার বাথানে ৫০টি মহিষ রয়েছে। আমাদের এলাকায় ঘাস কম থাকায় এখানে এসেছি। প্রায় ছয় মাস অবস্থান করব।”
আরেক রাখাল করিম বলেন, “নদীর কাছাকাছি সবুজ ঘাস বেশি থাকায় খামার পরিচালনা সহজ হয়। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতাও পাই।”
কাজীপুরের খামারি রহিমা বলেন, “এক সপ্তাহ আগে বাথানে এসেছি। কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর কারণে দুধ উৎপাদন বেড়েছে। আগে দুই বেলা মিলিয়ে ৭ মন দুধ পেতাম, এখন হচ্ছে ৮ মন। আরও বাড়বে।”
কাজিপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, “কাঁচা ঘাসের কারণে পশুর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং রোগবালাই কমবে। আমরা বাথানগুলোতে গলা ফুলা রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রদান করছি। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য নম্বরও দেয়া আছে।”
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বলেন, “প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন জেলা থেকে বাথানিরা এসেছে। চরাঞ্চলে গজিয়ে ওঠা সবুজ ঘাসে দুধ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি দুধ ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় তারা লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”
সব মিলিয়ে যমুনার চরাঞ্চলে নান্দনিক সবুজায়নের ফিরে আসা বাথানিদের জন্য স্বস্তি ও লাভজনক মৌসুম নিয়ে এসেছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।




Comments