Image description

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অয়ন সাহার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির টাকায় তিনি ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ভবন। সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সরেজমিনে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর শহরের হরিসভা এলাকায় অয়ন সাহার পৈতৃক বাড়ি। তার বাবা অরুপ কুমার সাহা ছোটখাটো ব্যবসা করে কোনোমতে সংসার চালাতেন। কিন্তু ২০১১ সালে অয়ন সাহা চাকরিতে যোগদানের পরই পাল্টে যায় ওই পরিবারের ভাগ্য। গ্রামের বাড়িতে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে তিনি নির্মাণ করেছেন তিনতলা ডুপ্লেক্স ভবন। এছাড়া নামে-বেনামে তিনি অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুদকে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অয়ন সাহা তার আগের কর্মস্থল উজিরপুর ও বানারীপাড়ায় থাকাকালে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। বিশেষ করে বানারীপাড়া উপজেলায় ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্পগুলো তদন্ত করলেই তার দুর্নীতির প্রমাণ মিলবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশেষ বরাদ্দের ৪টি প্রকল্পের ৮০ লাখ টাকার কাজ নামমাত্র করে বাকি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। এছাড়া অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (৪০ দিনের কর্মসূচি) খাতে প্রতিবছর বরাদ্দ থাকে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৩ বছরে এই খাতে আসা প্রায় ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকার সিংহভাগই তিনি ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।

এসব অনিয়মের বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলার উত্তরকুল গ্রামের মোজাম্মেল হক নামের এক ব্যক্তি দুদক প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগের অনুলিপি বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবং আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরেও দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে তিনি আগৈলঝাড়া উপজেলায় কর্মরত। অভিযোগ রয়েছে, এখানেও তিনি টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নমূলক প্রতিটি প্রকল্প থেকে অফিস খরচের নামে ৫ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন আদায় করেন। মসজিদ, মন্দির ও মাদরাসার বরাদ্দ থেকেও তিনি কমিশন নেন বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে গৈলা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শামীম ফড়িয়া ও রোজিনা আক্তার, রাজিহারের ইউপি সদস্য আনোয়ার সরদার এবং রত্নপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সুমন মৃধাসহ একাধিক প্রকল্পের সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, সঠিক নিয়মে প্রকল্পের কাজ শেষ করলেও পিআইও অয়ন সাহাকে ৫-৮% ঘুষ না দিলে তিনি বিল ছাড় করেন না। টাকা না দিলে দীর্ঘদিন বিল আটকে রেখে কালক্ষেপণ করেন। এছাড়া মাস্টার রোলের খরচের কথা বলেও টাকা কেটে রাখা হয়। ফলে উন্নয়ন কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, ‘পিআইও অফিসে এখন প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য চলে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যেখানে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নীরব, সেখানে আমাদের মতো জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করে অযথা বিপদে পড়তে চান না।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অয়ন সাহা অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা অস্বীকার করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার অফিসে এসে দেখে যান আমি কোনো কাজে অনিয়ম করেছি কি না।’ দুদকের অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক সুশান্ত রায় বলেন, ‘যে-কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিখন বনিক বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে বিষয়টি ওই দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’