চট্টগ্রামে বাজার
আলু-বাঁধাকপিতে স্বস্তি মিললেও মাছের বাজারে আগুন
শীতের আগমনে চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ প্রচুর। থরে থরে সাজানো শীতকালীন নানা সবজি। কিন্তু সরবরাহের এই প্রাচুর্যও স্বস্তি দিচ্ছে না সাধারণ ক্রেতাদের। সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে বেশিরভাগ সবজির দাম। বাজারে একমাত্র আলু ও বাঁধাকপি ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজির দামই এখন প্রতি কেজি ৬০ টাকার ওপরে।
অন্যদিকে, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর সুফল মিলছে না। বিক্রেতারা পুরনো মজুদের অজুহাতে বাড়তি দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও মাছের বাজার এখনো সাধারণের নাগালের বাইরে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, কাজির দেউড়ি, চকবাজার ও ডিসিহিল সংলগ্ন বাজারসহ বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান ঘুরে বাজারদরের এই চিত্র দেখা গেছে।
গত সপ্তাহে শীতকালীন অধিকাংশ সবজি প্রতি কেজি ৬০ টাকার মধ্যে নেমে এসেছিল, যা ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার থেকে সেই চিত্র বদলে গেছে। বেশ কয়েকটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকায়। নতুন শিম ৯০ থেকে ১১০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল, দেশি পটল, গাজর ও শসা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছোট করলা ৭০-৮০ টাকা এবং ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, কচুর লতি, কচুরমুখী, লাউ ও চালকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। অথচ গত সপ্তাহেই এসব সবজির দাম ছিল ৫০ থেকে ৮০ টাকার নিচে।
মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অন্যান্য সবজির দাম বাড়লেও কাঁচামরিচের ঝাঁজ কিছুটা কমেছে; বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। লাল শাক, পালং শাকসহ সব ধরনের শীতকালীন শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।
খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সবজির দাম আড়ত বা পাইকারি পর্যায়ে বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
সবজির চড়া দামের ভিড়ে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে আলু, বাঁধাকপি ও ফুলকপি। ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। শালগমের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ৬০ টাকায় নেমেছে। মূলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
সবচেয়ে বড় স্বস্তি মিলেছে আলুর বাজারে। বগুড়ার নতুন আলুর দাম কেজিতে অন্তত ৪০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের পুরোনো আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বগুড়ার পুরোনো আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।
গত সপ্তাহের শেষের দিকে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় পৌঁছেছিল। তবে গত দুই দিনে পাইকারিতে কেজিতে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম কমেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ এখনো ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতাদের যুক্তি, পাইকারি দাম কমলেও তাদের কাছে আগের বেশি দামে কেনা পেঁয়াজ মজুত রয়ে গেছে। তাই লোকসান এড়াতে তারা বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন। তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পাইকারি দর অনুযায়ী খুচরায় পেঁয়াজ ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হওয়ার কথা।
মসলার বাজারে দেশি রসুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা এবং চায়না রসুন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং ভারতীয় আদা মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। শুক্রবার বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। হাঁসের বাজারে দেড় কেজি ওজনের প্রতি পিস দেশি হাঁস ৫০০ টাকা এবং দুই কেজি ওজনের চীনা হাঁস ১০০০ থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৯০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকায়। অন্যদিকে ডিমের বাজারে লাল ডিমের ডজন ১২০ টাকা থেকে কমে ১০৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সাদা ডিম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা এবং দেশি হাঁসের ডিম ১৯০ থেকে ২০০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বা মাংসের দামে কিছুটা ওঠানামা থাকলেও মাছের দাম কমছেই না। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে মাছের বাজার। বাজারে প্রতি কেজি লইট্যা মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রুই ও কাতলা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, ছোট পাবদা ৪০০ টাকা এবং মাঝারি সাইজের পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিং মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং সরপুঁটি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণের মাছ হিসেবে পরিচিত বড় সাইজের তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং পাঙাস ও সিলভার কার্প ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।




Comments