কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে হেমন্তের শেষে নতুন ধানের আগমনে আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব। এই লোকজ ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নড়াইলে অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী নবান্ন ও পিঠা উৎসব। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) নড়াইল শহরের ধোপাখোলায় ‘নন্দন কানন শিশু বিকাশ ও সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র’ পঞ্চম বারের মতো এই উৎসবের আয়োজন করে।
দৃষ্টিনন্দন নকশা আর ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের পিঠা-পুলির ঘ্রাণে উৎসব প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে মুখরিত। উৎসবে প্রায় ৩০ প্রকারের পিঠার পসরা সাজানো হয়। এর মধ্যে ছিল- দুধ পায়েস, চিতই, রস পিঠা, ভাপা, পুলি, দুধপুলি, ধুপি, গুড়ের পায়েস, রস পাকান, ফুল পাকান, ভাজা পিঠা, নাড়ু, পাটিসাপ্টা ও সেমাই পিঠা উল্লেখযোগ্য। পিঠা-পুলির এই বর্ণিল আয়োজনের পাশাপাশি নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি এবং চারু ও কারুশিল্প প্রদর্শনী উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
উৎসবে পিঠা তৈরিতে অংশ নেওয়া স্কুল শিক্ষক নীলিমা বাগচী বলেন, ‘‘বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান পিঠা-পুলি। একে সবার কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং অতিথিদের আপ্যায়ন করতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। আমরা প্রায় ১০ জন নারী মিলে কেউ মধ্যরাত, আবার কেউ ভোররাত পর্যন্ত জেগে ৩০ রকমের পিঠা তৈরি করেছি।’’
বেলা ১১টায় নন্দন কানন চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সংগঠনের সভাপতি লেখক সুভাস বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মায়া রানী বিশ্বাস, দৈনিক ওশান পত্রিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী, বেসরকারি সংস্থা রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব স্বপন কুমার গুহ, সংস্কৃতি পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি অর্ধেন্দু প্রসাদ ব্যানার্জী।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- শরীফ আশরাফ উজ্জামান, লেখক ও কবি হুসাইন বিল্লাহ, লেখক সুরঞ্জন রায়, ডা. শ্যামল কৃষ্ণ সাহা, ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা, বিদ্যুৎ কুমার সান্ন্যাল, মাহবুবুর রহমান লিটু ও শামীমূল ইসলাম টুলু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার রায়।
আলোচনা শেষে অতিথিরা চারু ও কারুশিল্পের প্রদর্শনী এবং পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরে সংগঠনের শিল্পীরা লোকসংগীত ও লোকনৃত্যের মধ্য দিয়ে নবান্নকে বরণ করে নেন।
বক্তারা বলেন, ‘‘বিশ্বায়নের এই যুগে নবান্ন উৎসব এখন কেবল পাঠ্যবইয়ের পাতা, ফেসবুক ও ইউটিউবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে ফসল ও কৃষক থাকলেও উৎসবের আমেজ কমে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে আবহমান বাংলার এই শেকড় সন্ধানী ঐতিহ্য পৌঁছে দিতে প্রতি বছর এমন নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা জরুরি।’’




Comments