‘আব্বু আমি ডিউটিতে যাবো, দোয়া করো’ বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে বলা এটাই ছিল সেনাসদস্য শামীম রেজার শেষ কথা। আফ্রিকার দেশ সুদানের আবেই এলাকায় শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই গর্বিত সদস্য। তার মৃত্যুর খবরে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গি গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে শামীমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। বাড়ির সামনে বসে বিলাপ করছেন বাবা আলম ফকির। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। সন্তান হারানোর বেদনায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকার বাতাস।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম ছিলেন সবার বড়। বাবা আলম ফকির কৃষিকাজ করে অতিকষ্টে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছিলেন। আট বছর আগে শামীম সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে গিয়েছিলেন। তার মেজ ভাই সোহেল ফকির সৌদি আরব প্রবাসী, সেজ ভাই সোহান এবং একমাত্র বোন মরিয়ম খাতুন হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা আলম ফকির বলেন, ‘সবশেষ গত শুক্রবার মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে ছেলের সঙ্গে কথা হয়। সে জানায় সুস্থ আছে। বলেছিল “আব্বু আমি ডিউটিতে যাবো, দোয়া করো।” কিন্তু ডিউটিতে গিয়ে আমার ছেলেটা আর ফিরল না। শনিবার রাত ১২টার দিকে আমরা খবর পাই শামীম আর নেই।’
দেড় বছর আগে কুষ্টিয়ার খোকসায় বিয়ে করেছিলেন শামীম। তার স্বপ্ন ছিল ভাই-বোনদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবেন। ইতোমধ্যে মেজ ভাইকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন এবং ছোট ভাইকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাবা বলেন, ‘মিশন থেকে ফেরার সময় একমাত্র বোনের জন্য সোনার গহনা নিয়ে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু এক নিমিষেই সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’
নিহত শামীমের ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমরা তিন ভাই ভিডিও কলে শেষবারের মতো কথা বলেছিলাম। ভাইয়ের ৮ বছরের স্বপ্ন ছিল মিশনে যাওয়া। সেই স্বপ্নই আজ আমার ভাইয়ের প্রাণ কেড়ে নিল! আমাদের এখন একটাই দাবি, দ্রুত ভাইয়ের মরদেহ ফেরত চাই।’
ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল শামীমের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছে।
এ বিষয়ে কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘শামীম রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। আমি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। উপজেলা প্রশাসন সবসময় এই শহীদ পরিবারের পাশে থাকবে।’
উল্লেখ্য, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সুদানের আবেই এলাকায় ওই সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত এবং আরও আটজন আহত হয়েছেন।




Comments