নবীনগরে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া, নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা দীর্ঘদিন ধরেই সংঘর্ষপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। তবে সম্প্রতি এখানে দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি বেড়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। তুচ্ছ ঘটনাতেও এখন কথার আগে চলছে গুলি। গত দুই মাসে প্রকাশ্যে গোলাগুলির চারটি ঘটনায় দুইজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, মেঘনার বালুমহলের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত সব মিলিয়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে তটস্থ হয়ে পড়েছে পুরো জনপদ। সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে রাব্বি নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। এর আগে গত ১ নভেম্বর উপজেলার বড়িকান্দিতে গণিশাহ মাজারের দানবাক্স নিয়ন্ত্রণ ও পূর্ব শত্রুতার জেরে একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। এতে শিপন ও ইয়াছিন নামে দুইজন নিহত হন। নিহত ইয়াছিন ছিলেন ওই হোটেলের নিরীহ কর্মচারী। পরে পাল্টা হামলায় এমরান মাস্টার নামে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় র্যাব প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করলেও আতঙ্ক কাটেনি।
এছাড়া গত ২৪ অক্টোবর পৌর এলাকার পদ্মপাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুল রহমান মুকুলকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। উপজেলার নূরজাহানপুর এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় খলিল মিয়া (৫৫) ও তার ছেলে মো. আসিফ (২০) গুলিবিদ্ধ হন। বছরের শুরুতে বাড্ডা-সলিমগঞ্জের দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষেও ব্যাপক গোলাগুলি হতে দেখা গেছে।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, খোদ পুলিশ কর্মকর্তাও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পাননি। মাস দুয়েক আগে নবীনগর থানার তৎকালীন ওসি শাহিনূর ইসলাম পরিবার নিয়ে মেঘনা নদীতে বেড়াতে গেলে বালুমহলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদের ধাওয়া করে। ওই সময় ওসির সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন নবীনগর পশ্চিম ইউপির চেয়ারম্যান নূরে আলমসহ স্থানীয়রা। পরে ১ অক্টোবর উপজেলার সাহেবনগর গ্রাম থেকে খান সাহেব নামে এক অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নবীনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন শান্তি। তিনি বলেন, ‘নবীনগরে একের পর এক গোলাগুলির ঘটনা আমাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। আমরা আশা করব, প্রশাসন ও পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের বিএনপি প্রার্থী ও সাবেক এমপি আবদুল মান্নান বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।’
গত ২১ সেপ্টেম্বর আদালতপাড়ার একটি রূপচর্চাকেন্দ্রে রেখে যাওয়া ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল ও ১০ লাখ জাল টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৪ জনকে আটক দেখানো হয়। তবে একের পর এক ঘটনার পরও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে নবীনগর থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি থানায় নতুন যোগদান করেছি। পৃথক দুটি গুলির ঘটনায় মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) পিয়াস বসাক জানান, ‘অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অপরাধী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’




Comments