Image description

রক্তিম সূর্যের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে মুক্তির স্বাদ এনে দেওয়া জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে এই পবিত্র বেদি। মাসব্যাপী অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিবিড় যত্নে ধুয়ে-মুছে, রং-তুলির আঁচড়ে এবং বাহারি ফুলের বর্ণিল সজ্জায় অপরূপ রূপে সেজে উঠেছে সবুজ ঘেরা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ১০৮ হেক্টর জমির ওপর নির্মিত এই স্মৃতিস্তম্ভের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের কর্মীদের ক্লান্তিহীন পরিশ্রমে স্মৃতিসৌধের মিনার থেকে শুরু করে পায়ে চলার পথ সবকিছুতেই লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। লাল-সবুজের ফুলের সমারোহে ছোট বাগানগুলো সেজেছে অপরূপ সাজে। চত্বরের সিঁড়ি ও নানা স্থাপনায় পড়েছে রংতুলির আঁচড়। এছাড়া স্মৃতিসৌধ এলাকার সড়কগুলোতে জ্বলে উঠেছে বাহারি রঙের বাতির বর্ণিল আলোকসজ্জা। মহাসড়কের আবর্জনা পরিষ্কার করে প্রবেশপথকে করা হয়েছে নির্বিঘ্ন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন আনু জানান, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গত এক মাস ধরে শতাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ধোয়ামোছা ও সাজসজ্জার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এখন কেবল অপেক্ষার পালা সেই ভোরের, যখন লাখো মানুষের ঢল নামবে এই প্রাঙ্গণে।

স্মৃতিসৌধের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা হয়তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি, কিন্তু যাদের আত্মত্যাগে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি, স্মৃতিস্তম্ভসহ তাদের কবরের পরিচর্যা করতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত।’

বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে, ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই পবিত্র অঙ্গনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত গার্ড অব অনার প্রদানের পর শ্রদ্ধা জানাবেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, কূটনৈতিক কোরের ডিন এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ভিআইপিদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলেই স্মৃতিসৌধের দ্বার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত করবেন শহীদ বেদি।

লাখো মানুষের সমাগম ও ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। এ বিষয়ে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক স্মৃতিসৌধ এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে এবারের ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে ১৩টি সেক্টরের মাধ্যমে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। পুরো এলাকা ৪ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা থাকবে।’