Image description

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় বন্য হাতির উপদ্রব ও আক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কখনো গভীর রাতে, আবার কখনো ভরদুপুরে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্য হাতির পাল। এতে পাহাড় ঘেরা এই জনপদের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পর্যটক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হাতির আতঙ্কে সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চালকদের মধ্যে এখন ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মাসে উপজেলায় হাতির আক্রমণে ৩ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এছাড়া বন্য হাতির তান্ডবে ব্যাপক ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে কাপ্তাই-আসামবস্তী সড়ক এবং কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এলাকাগুলো এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত নভেম্বর মাসে মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে পৃথক দুটি স্থানে দুই নারী হাতির আক্রমণে প্রাণ হারান। এর আগে বছরের শুরুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়। মূলত খাদ্যের সন্ধানেই বন্য হাতিগুলো পাহাড় ছেড়ে লোকালয় ও প্রধান সড়কে অবস্থান নিচ্ছে।

বন্য হাতির এই তান্ডব নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাপ্তাই বন বিভাগ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘সোলার ফেন্সিং’ (সৌরবিদ্যুতের বেড়া) কার্যক্রম। বনের সীমান্তবর্তী প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই সোলার ফেন্সিং সচল করা হয়েছে। এই বেষ্টনীতে মৃদু বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, যা হাতিকে আঘাত না করে কেবল ভয় দেখিয়ে বনে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। যান্ত্রিক ত্রুটি কাটিয়ে বর্তমানে এটি পুরোদমে কার্যকর রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কাপ্তাই একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হওয়ায় বহিরাগত পর্যটকদের সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাপ্তাই-আসামবস্তী ও নৌবাহিনীর প্রধান সড়কের যে স্থানগুলো দিয়ে নিয়মিত হাতি পারাপার হয় (এলিফ্যান্ট করিডোর), সেসব স্থানে পিচঢালা পথে উজ্জ্বল রঙ দিয়ে বড় বড় অক্ষরে ‘সাবধান, হাতি চলাচলের পথ’ লিখে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বনের প্রবেশমুখ ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বড় আকারের সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে পর্যটকদের উদ্দেশ্যে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। হাতি সামনে পড়লে হর্ন না বাজানো, ছবি তোলার সময় ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করা এবং দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে চলে যাওয়ার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাপ্তাই-আসামবস্তী সড়কের রাইন্যাটুকুন এলাকা, প্রশান্তি পার্ক সংলগ্ন এলাকা, সীতা পাহাড়, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের প্রবেশমুখ, নৌবাহিনী সড়ক, কামিল্লাছড়ি, রাইখালি, কারিগর পাড়া, খন্তাকাটা ও ব্যাঙছড়ি এলাকার পাহাড়গুলোতে হাতির খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে খাবারের সন্ধানে হাতির পাল যেখানে-সেখানে বিচরণ করছে, যা জানমালের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, "আমরা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নিয়মিত সোলার ফেন্সিং তদারকি করা হচ্ছে এবং সড়কে রঙ দিয়ে চিহ্নিত করার ফলে চালকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। তবে পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন বনের ভেতরে একা না যান এবং বন বিভাগের নির্ধারিত নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলেন।"

পার্বত্য চট্টগ্রামের এই প্রাকৃতিক পরিবেশে হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে বন বিভাগের প্রচেষ্টার পাশাপাশি স্থানীয়দের সতর্কতা ও সচেতনতা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।