Image description

ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইলে হাত দেন না তারা। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থেকে প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির এক বিশাল সাম্রাজ্য। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক মাহমুদুর রহমান তসলিম ও উচ্চমান সহকারী নূরুল আলম নোমানের বিরুদ্ধে এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ঘুষ না পেয়ে প্রকল্পের ফাইল আটকে রাখার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী।

বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দেওয়া অভিযোগে সোহাইল আহমেদ নামে এক ভুক্তভোগী জানান, তার এবং তার এলাকার কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড় না করে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করছেন এই দুই কর্মচারী। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তারা ফাইলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ‘টাকা ছাড়া কাজ হবে না’। এ অবস্থায় নিরুপয় হয়ে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জেলা পরিষদের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তসলিম দীর্ঘ ১৭ বছর এবং নোমান ১৩ বছর ধরে একই কর্মস্থলে বহাল আছেন। দীর্ঘ সময় একই জায়গায় থাকায় তারা হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। তারা নিজেদের পরিষদের 'ডন' হিসেবে পরিচয় দেন। স্থানীয়দের দাবি, তারা এতটাই প্রভাবশালী যে, পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা প্রশাসককেও তোয়াক্কা করেন না। এমনকি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি করার ক্ষমতা রাখেন বলেও দম্ভোক্তি করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, এই দুই কর্মচারী জেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ময়মনসিংহ শহর ও গ্রাম অঞ্চলে তাদের নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। একজন সাধারণ কর্মচারী হয়ে তারা কীভাবে এত বিপুল সম্পদের মালিক হলেন, তা নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে এই দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে স্থানীয় ঠিকাদার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে সচেতন মহল তাদের দ্রুত বদলি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়দের মতে, তাদের দুর্নীতির কারণে জেলা পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ঠিকাদাররা বৃহত্তর আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে হিসাবরক্ষক মাহমুদুর রহমান তসলিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অন্যদিকে উচ্চমান সহকারী নূরুল আলম নোমান বারবার কল কেটে দেন।

এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহ্ মো: কামরুল হুদা বলেন, "আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। অনিয়মের কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"