একসময় মাটির চুলায় লাকড়ি আর গোবরের ধোঁয়ায় রান্না করতে গিয়ে চোখের পানি ফেলতেন জামালগঞ্জের গৃহিণীরা। তবে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের ফলে সেই চিত্র এখন বদলে গেছে। উপজেলার প্রায় ২০টি পরিবার এখন বায়োগ্যাসের সুবিধায় ধোঁয়াবিহীন ও সাশ্রয়ী রান্নার সুযোগ পাচ্ছেন।
উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ‘বায়োগ্যাস ইমপ্যাক্ট’ প্রকল্পের আওতায় খামারি ও কৃষকদের মধ্যে এই প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের বড় মাহমুদপুর গ্রামের আফিয়া বেগম (৩৫) জানান তার জীবনমান পরিবর্তনের কথা। তিনি বলেন, “বিয়ের পর দীর্ঘ ১৫ বছর মাটির চুলায় ধোঁয়ার কষ্টে রান্না করেছি। এখন বায়োগ্যাস থাকায় খুব সহজেই রান্না করতে পারছি। আমাদের ১৫ সদস্যের পরিবারে আগে মাসে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে ৩ হাজার টাকা খরচ হতো, যা এখন আর লাগছে না।”
সরেজমিনে বড় মাহমুদপুর, তেলিয়া শাহাপুর ও সাচনা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গরুর খামার থেকে নালার মাধ্যমে গোবর বায়োগ্যাস কূপে নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে উৎপাদিত গ্যাসে চলছে রান্না।
একই গ্রামের সুবিধাভোগী জমিরুল ইসলাম জানান, যুব উন্নয়ন থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এবং নিজের আরও ২০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি প্ল্যান্ট বসিয়েছেন। এখন বায়োগ্যাস উৎপাদনের পর অবশিষ্ট গোবর থেকে তৈরি জৈব ও কেঁচো সার বিক্রি করে তিনি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন। তিনি বলেন, “একবার প্ল্যান্ট বসালে প্রায় ৪০ বছর জ্বালানি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”
সাচনা গ্রামের কাকলী আক্তার জানান, তার ভাইয়ের খামারের গোবর দিয়ে প্ল্যান্ট বসিয়ে নিজেরা ব্যবহারের পাশাপাশি আত্মীয়দেরও সংযোগ দিয়েছেন। এতে মাসে তাদের ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বর্তমানে ৩টি ইউনিয়নে ৭টি বায়োগ্যাস ইমপ্যাক্ট প্রকল্প চালু রয়েছে। বাড়িতে তিনটি গরু থাকলেই ১০০ সিএফটি ক্ষমতার প্ল্যান্ট বসিয়ে দুটি চুলা চালানো সম্ভব।
জামালগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ মো. আজগর আলী বলেন, “পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পের মাধ্যমে জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরতা কমছে। এ উপজেলায় ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৭টি পরিবারকে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জামালগঞ্জকে ‘বায়োগ্যাস ভিলেজ’-এ রূপান্তরের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুশফিকীন নূর বলেন, “যেহেতু এই উপজেলায় পাইপলাইনের গ্যাস নেই, তাই বায়োগ্যাস প্রকল্প এখানে অত্যন্ত জরুরি। এতে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বিষমুক্ত জৈব সার ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।”




Comments