Image description

এক সময়ের প্রমত্তা ভৈরব নদ এখন নাব্যতা সংকটে ধুঁকছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই নদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের ব্যস্ততম নওয়াপাড়া নদী বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে স্থবির হয়ে পড়তে পারে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে নদের দুই-তৃতীয়াংশ চরে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে পলি জমে নদের গভীরতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে জোয়ারের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঝনদীতে নোঙর করে থাকতে হচ্ছে পণ্যবাহী কার্গো জাহাজগুলোকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নূর আলম পাটোয়ারী বলেন, “নাব্যতা কমে যাওয়ায় কার্গো জাহাজগুলো ভাটার সময় বন্দরে ভিড়তে পারছে না। এই সংকট নিরসন না হলে নওয়াপাড়ার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা-বাণিজ্য ধসে পড়বে। এতে হাজার হাজার হ্যান্ডেলিং শ্রমিকসহ পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়ার পাশাপাশি সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে।”

নওয়াপাড়া সার ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক এবং নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম মুজিবর রহমান বলেন, “নওয়াপাড়া নৌ-বন্দর দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। নৌ, সড়ক ও রেলপথের সুবিধা থাকায় এখান থেকে বছরে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার কয়লা, সার, খাদ্যশস্য ও পাথরসহ বিভিন্ন আমদানি করা পণ্য সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। এই পুরো বাণিজ্য ব্যবস্থাই ভৈরব নদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু নদে পলি জমে যেভাবে নাব্যতা হারাচ্ছে, তাতে আমরা চরম উদ্বিগ্ন।”

এ বিষয়ে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ জানান, শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট কিছুটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে সংকট নিরসনে বিআইডব্লিউটিএ-র পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ৪টি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “মূল নদের যেসব জায়গায় নাব্যতার সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেখানে খনন কাজ চলছে। দ্রুত পলি অপসারণ করে নাব্যতার সংকট দূর করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

সংশ্লিষ্টদের মতে, নওয়াপাড়া বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় ভৈরব নদের নিয়মিত ও দীর্ঘমেয়াদী ড্রেজিং নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় এই বন্দরটি তার জৌলুস হারানোর পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।