নান্দাইলে মাইকিং করে দুই গ্রামের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ৩০
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের পাঁচরুহি বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে মাইকিং করে ঘোষণা দিয়ে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার ইটপাটকেলের মুখে পড়েছেন সেনাসদস্যরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত পাঁচরুহি গ্রামের আদম ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়াকে (৫০) কেন্দ্র করে। অভিযোগ রয়েছে, বাচ্চু মিয়া এলাকার অন্তত ১৫ জনকে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাঠান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা কাজ না পেয়ে বিপাকে পড়েন এবং অনেকে পুলিশের হাতে আটক হন। ভুক্তভোগীদের পরিবার বাচ্চু মিয়ার কাছে এর বিচার চাইলে তিনি উল্টো তাদের নাজেহাল করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে রোববার সকালে সোহেল ভেন্ডারের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর পাল্টা প্রতিরোধ হিসেবে বাচ্চু মিয়ার পক্ষ থেকেও মাইকিং করা হয়। এরপরই দুই গ্রামের মানুষ লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় কয়েকজন সেনাসদস্য একটি ঘরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা উদ্ধার হন।
সংঘর্ষের বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু কালাম বলেন, “জনতার জমায়েত দেখে সেনাবাহিনী আকস্মিক লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।”
তবে আদম ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়ার দাবি, সোহেল ভেন্ডার তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। টাকা না দেওয়ায় লোকবল নিয়ে তার বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে। অন্যদিকে সোহেল ভেন্ডার বলেন, “আমি সালিশ করতে গিয়েছিলাম। ভুক্তভোগীরা বিচার চাইলে বাচ্চু আমাকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই খবরে গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে পড়ে।”
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী কিছুটা লাঠিচার্জ করে। এসময় দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন আহত হন। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত ওয়ারেন্ট অফিসার মো. মোর্শেদ জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান। এক পক্ষকে থামিয়ে অন্য পক্ষের দিকে যাওয়ার সময় ভয়ে মানুষ দিক-বিদিক ছুটতে গিয়ে মাটিতে পড়ে আহত হন। সেখানে কোনো লাঠিচার্জ করা হয়নি। তবে কিছু লোক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
আহতদের উদ্ধার করে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।




Comments