Image description

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌরসভায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি সড়কের কাজ শেষ হওয়ার আগেই দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলাকালেই বিভিন্ন স্থানে হাতের ছোঁয়ায় বা পায়ের ঘষায় উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। এমনকি মুরগির আঁচড় কিংবা শিশুদের খেলাধুলার সময়ও উঠে যাচ্ছে পিচ মাখানো পাথর।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আইআইডিবি (নগর উন্নয়ন) প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৫.১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এমএস রুনা এন্টারপ্রাইজ’। ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালের জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। বর্তমানে কাজের প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে খোদাদাতপুর গ্রাম এলাকায় দেখা গেছে, সদ্য কার্পেটিং করা সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। রোলার ও কম্প্যাকশন সঠিকভাবে না হওয়ায় পাথরগুলো আলগা হয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা বাবু, সালাম ও ইয়াসিরসহ শতাধিক মানুষ অভিযোগ করে বলেন, “দুই দিনও হয়নি রাস্তা করা হয়েছে, এর মধ্যেই মুরগির আঁচড় দিলে পিচ উঠে যাচ্ছে। ট্রাক্টর বা ভারী কোনো গাড়ি চললে এই রাস্তা এক দিনও টিকবে না। ঠিকাদার নিম্নমানের ৩ নম্বর ইট ও বালু দিয়ে কাজ শেষ করে এখন নামমাত্র কার্পেটিং করছেন।”

এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ তুললেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো কর্ণপাত করেনি। বরং ওই অবস্থাতেই তড়িঘড়ি করে রোলার চালিয়ে কার্পেটিং শুরু করা হয়। স্থানীয়দের দাবি, নিম্নমানের কাজের নেপথ্যে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজের রহস্যজনক ভূমিকা রয়েছে। শুরুতে অনিয়ম স্বীকার করলেও পরে তিনি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার সুনীল শুরুতে কিছু ভুল স্বীকার করলেও পরে তা অস্বীকার করেন। তবে ঠিকাদার নজরুল ইসলাম কাজের মান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে উল্টো অপেশাদার আচরণ করেন। তিনি সাংবাদিকদের হেয় করে কথা বলেন এবং উচ্চপর্যায়ের তদবিরের দোহাই দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।

পৌর প্রশাসক আব্দুল আল মামুন কাওসার শেখ বলেন, “আমি একাধিকবার কাজ পরিদর্শন করেছি এবং ঠিকাদারকে স্পষ্ট জানিয়েছি কাজের মান খারাপ হলে বিল দেওয়া হবে না। সহকারী প্রকৌশলীকে তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলমান কাজ কেন উঠে যাচ্ছে, বিষয়টি আমি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি।”

এদিকে, নিম্নমানের কাজের বিষয়ে সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজের নীরবতা ও ঠিকাদারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি অবিলম্বে কাজ বন্ধ করে কারিগরি তদন্তের মাধ্যমে নতুন করে মানসম্মত সড়ক নির্মাণ করতে হবে, অন্যথায় এটি দুর্নীতির একটি স্থায়ী মডেলে পরিণত হবে।

মানবকণ্ঠ/ডিআর